দাদার আয় ভরসা, অধ্যাপনা স্বপ্ন শম্ভুর

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share:

সফল: শম্ভু দাস। নিজস্ব চিত্র

বাবা নেই। বয়স এবং শরীরের কারণে মা কোনও কাজ করতে পারেন না। পেশায় চা শ্রমিক দাদা ফণী দাসের আয়ই ভরসা। টাকার অভাবে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার কথা ভাবতেও পারেননি শম্ভু। তাতে কী? স্কুলের শিক্ষকরা তো আছেন। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে মুরলিগঞ্জ হাইস্কুলের ওই ছাত্র এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬৬ নম্বর পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

শম্ভুর স্বপ্ন ইংরেজির অধ্যাপক হবে। সেই স্বপ্নের জাল বুনেই এগিয়ে চলা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা গজেন দাস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালে জুলাই মাসে মারা যান। তার পর থেকেই চাপ বেড়ে যায়। দুই দাদার মধ্যে বড় জনের পৃথক সংসার। তিনিও চা কারখানার শ্রমিক। যা আয়, তাতে তিনি মা চাঁদমণিদেবীকে সংসারের কাজে বা ভাই শম্ভুকে পড়াশোনার জন্য কোনও সাহায্য করতে পারেন না। এই বিপদে শম্ভুর ছোট দাদা এগিয়ে না এলে হয়তো পড়াশোনাটাই বন্ধ করে দিতে হত তাকে। কলা বিভাগের ছাত্র শম্ভু ইংরেজিতে ৯৫ এবং বাংলাতে ৯০ পেয়েছে। ভূগোলে এবং ইতিহাসে পেয়েছে ৯৪ করে। রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ৯৩ এবং শিক্ষায় ৮০।

শম্ভুর কথায়, সংসারের ওই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াইতে জিততে পড়াশোনাটাকেই হাতিয়ার করেছেন। কখনও স্কুলের ক্লাস বাদ দেননি। একটা ক্লাস না করতে পারলে সেই পড়া কে তাঁকে বুঝিয়ে দেবে? স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুল আলমও বলেন, ‘‘গৃহশিক্ষকের কাছে না পরে নিয়মিত স্কুলের ক্লাস করে যে ভাল ফল করা যায় সেটাই করে দেখিয়েছে শম্ভু। অন্যদের থেকে ওর কৃতিত্ব অনেক বেশি।’’

Advertisement

একই ভাবে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে ভাল ফল করেছেন শিলিগুড়ি নেতাজি হাই স্কুলের ছাত্র রাজু ঘোষ। কলা বিভাগের ছাত্র রাজু পেয়েছে ৪৪২। ছোটবেলাতেই বাবা ছেড়ে চলে যান। কোলের শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মা পুতুলদেবী। রেস্টুরেন্টে কাজ করে ছেলেকে পড়ান তিনি। পরিচিতির সুবাদে ডাবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা স্বপন চক্রবর্তীকে মামা বলে ডাকেন রাজু। সকাল থেকে সেখানেই থাকেন তাঁরা। রাজুর পড়াশোনায় স্বপনবাবুও অনেক সময় সাহায্য করেন। বিকেলের দিকে পুতুলদেবী কাজে চলে যান। রাতে কাজ সেরে ছেলেকে নিয়ে ফেরেন শান্তিনগরের বাড়িতে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর এ বার রাজু ইতিহাস নিয়ে পড়তে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন