কোচবিহারে শিবযজ্ঞ

মণিতে সূর্যরশ্মি ধরে যজ্ঞে আগুন

রাজাদের আমলের ঐতিহ্য মেনে লক্ষ আহুতির শিবযজ্ঞ উৎসব শুরু হল কোচবিহারে। সোমবার কোচবিহার শহর লাগোয়া খাগরাবাড়ি এলাকার স্থায়ী মন্দিরে যজ্ঞ শুরু হয়। বিশ্ববাসীর কল্যাণের আকুতি নিয়ে যজ্ঞে অংশ নিয়েছেন ২০ জন পুরোহিত। রোজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত যজ্ঞকুন্ডে আহুতি দেবেন তাঁরা। ১৩ মে শুক্রবার পর্যন্ত যজ্ঞানুষ্ঠান চলবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০২:৩৮
Share:

কোচবিহারে চলছে যজ্ঞ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

রাজাদের আমলের ঐতিহ্য মেনে লক্ষ আহুতির শিবযজ্ঞ উৎসব শুরু হল কোচবিহারে।

Advertisement

সোমবার কোচবিহার শহর লাগোয়া খাগরাবাড়ি এলাকার স্থায়ী মন্দিরে যজ্ঞ শুরু হয়। বিশ্ববাসীর কল্যাণের আকুতি নিয়ে যজ্ঞে অংশ নিয়েছেন ২০ জন পুরোহিত। রোজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত যজ্ঞকুন্ডে আহুতি দেবেন তাঁরা। ১৩ মে শুক্রবার পর্যন্ত যজ্ঞানুষ্ঠান চলবে। এ বারেও শিব যজ্ঞানুষ্ঠান ঘিরে প্রথম দিন থেকেই উৎসাহী ভক্তদের ঢল নেমেছে। ভক্তদের বিশ্বাস, যজ্ঞ হলেই বৃষ্টি নামবে। দূর হয়ে যাবে অনাচারের গ্লানি।

শিবযজ্ঞ সমিতির সভাপতি হিমাদ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “এ বার শিবযজ্ঞ উৎসবের ৬৯ বছর। ১৯৪৮ সালে কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের সভাপতিত্বে আয়োজিত ধর্মসভার সিদ্ধান্ত মেনে ফি বছর ওই শিবযজ্ঞ হয়ে আসছে। আগের তুলনায় শিবযজ্ঞের প্রসার বেড়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, ভিন রাজ্য থেকেও ভক্তরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। যজ্ঞানুষ্ঠানের খরচও ভক্তরা দিচ্ছেন।” সেই সঙ্গে হিমাদ্রীবাবুর সংযোজন, কোচবিহারের রাজবংশকে শিববংশ বলা হত। ১৯৪৮-৫০ সাল পর্যন্ত ১০ জন পূজারী যজ্ঞানুষ্ঠানে সামিল হতেন। ১৯৫১ সাল থেকে ২০ জন পূজারি থাকছেন। এ বারেও যজ্ঞানুষ্ঠানে ২০ জন পূজারী রয়েছেন। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মহারাজ জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ নিজেও এক সময় ওই শিবযজ্ঞের অনলে লোভ, স্বার্থপরতা, হিংসা পুড়ে যাক বলে মন্তব্য করেছিলেন।

Advertisement

শিবযজ্ঞ সমিতি সূত্রেই জানা গিয়েছে, যজ্ঞ কুণ্ডে অগ্নিসংযোগে প্রদীপ বা মোম কিংবা দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয় না। বরাবর সূর্যরশ্মির মাধ্যমেই যজ্ঞকুণ্ডে অগ্নিসংযোগ করার রেওয়াজ রয়েছে। এবারেও প্রাচীন ওই রীতি মেনে নীলকান্ত মণির মাধ্যমে সূর্যের রশ্মি আতস কাচে প্রতিফলিত করে শিব মূর্তির পাদদেশে যজ্ঞকুণ্ডে অগ্নিসংযোগ করা হয়। যজ্ঞকুণ্ডের চার দিকে ২০ জন পূজারীর সমবেত মন্ত্রোচ্চারণে শুরু হয় আহুতির পর্ব। ওই আহুতির জন্য দেড় মন ঘি, দু’শো মন শাল, আম, বট, পাকুড়ের ডাল, কাঠ আনা হয়েছে। টানা পাঁচ দিন দিবালোকে যজ্ঞানুষ্ঠানে আহুতির কাজ চলবে। শেষ দিনে এক লক্ষ আট বার আহুতিকে পূর্ণাহুতি ধরে যজ্ঞানুষ্ঠান শেষ হবে। যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত রুদ্রাক্ষ ঘুরিয়ে ঘি, কাঠ, তিল, চাল সহ অন্য উপকরণ দিয়ে লক্ষ আহুতির পুরো হিসাব রাখেন। শিবযজ্ঞ সমিতির সম্পাদক জয়শংকর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আগে যজ্ঞের খরচ জোগাড়ে চাঁদা তুলতে বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হত। কিন্তু এখন ওই সমস্যা নেই। ভক্ত ও বাসিন্দারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেরাই যজ্ঞের খরচের দান মন্দিরে এসে তুলে দেন। তাতে তিন লক্ষাধিক টাকা সংগৃহীত হয়। তা দিয়ে চলে যজ্ঞের খরচ। মন্দিরের পুজো থেকে প্রসাদ বিতরণের ব্যাপারে ওই দানের টাকায় কাজ হয়। ভক্তদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। শিবযজ্ঞ উপলক্ষে আয়োজিত মেলাতেও ভিড় জমান বাসিন্দারা। এবারেও মন্দিরের কাছে মেলা শুরু হয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শিব যজ্ঞ উপলক্ষে তৃতীয় দিন বুধবার কুমারী পুজো হবে। ওই দিন ১২ জন কুমারীকে দেবীরূপে পুজো করা হবে। সকলের বয়স ৩ বছর থেকে ৮ বছরের মধ্যে। পুজোর দিন মন্দিরে ভোগ খাওয়ানো হয় সবাইকে। তাতে পোলাও, পনির, চাটনি, পায়েস, দই, মিষ্টি, পাঁচ রকমের ভাজা , ফল দেওয়া হয়। সকলকেই দেওয়া হয় একটি সোনার কানের দুল, আংটির মতো উপহার। চতুর্থ দিন মন্দির চত্বরে সধবা পুজো করা হয়। পঞ্চম দিনে পূর্ণাহুতির পর যজ্ঞের ভস্ম, শান্তির জল ভক্তদের দেওয়া হয়। সে সময় ভিড় উপচে পড়ে।

উদ্যোক্তারা জানান, কোচবিহারের মহারাজের সভাপণ্ডিত প্রয়াত রমাশঙ্কর কাব্য ব্যাকরণ স্মৃতিতীর্থ মহাশয় শিব যজ্ঞের সিদ্ধান্ত নেন। উদ্যোক্তা কমিটির সদস্য বিশ্বজিৎ শঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “ওই মন্দির চত্বরে শতাধিক ভক্তের থাকা, খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন