প্রতীকী ছবি।
যে বর্গীর ভয়ে এক সময়ে তটস্থ হয়ে থাকত বাংলা, তাকেই এ বার বঙ্গ সংস্কৃতির সঙ্গে জুড়তে উদ্যোগী হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)।
সঙ্ঘ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ জুন ছত্রপতি শিবাজির রাজ্যাভিষেকের দিন হিসেবে উদ্যাপন করা হবে। সেই দিনটিকে ‘হিন্দু সাম্রাজ্য দিনোৎসব’ হিসেবে পালন করবে তারা। সে দিন সদস্যদের বাড়িতে শিবাজির ছবির সামনে ধূপধুনো জ্বালিয়ে বসার এবং সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শিবাজি উৎসব’ কবিতা পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছে সঙ্ঘ। একই সঙ্গে শিবাজিকে নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিভিন্ন সময়ে যা লিখেছিলেন, সেগুলিও পাঠ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, সংগঠনের উত্তরবঙ্গের নয়টি সাংগঠনিক জেলায় যে সব নেতৃত্ব ও শাখা নেতৃত্ব রয়েছেন, তাঁদের কাছেও এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
আরএসএস সংগঠনের উত্তরবঙ্গ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি বছরই ৪ জুন দিনটিকে সঙ্ঘ শিবাজির রাজ্যাভিষেকের দিন হিসেবে পালন করে। উত্তরবঙ্গের নয়টি সাংগঠনিক জেলায় সঙ্ঘের ৫০০টি শাখা রয়েছে। সেই শাখাগুলির উদ্যোগেই সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনও মাঠ বা স্কুল প্রাঙ্গণে ঘটা করে দিনটি পালন করা হত। কিছু কিছু শাখার পক্ষ থেকে এলাকায় শিবাজির ছবি নিয়ে শোভাযাত্রা বের হত।
কিন্তু এ বছর করোনার ফলে প্রকাশ্যে ঘটা করে সেই উৎসব পালনে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই সদস্যদের বাড়ি বাড়ি উৎসব পালনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯টি সাংগঠনিক জেলায় অন্তত ৫০ হাজার পরিবারে এই উৎসব পালন করার কর্মসূচি নিয়েছে তারা। এর মধ্যে মালদহ জেলায় ১০ হাজার, উত্তর দিনাজপুরে ৭ হাজার, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৬ হাজার, ইসলামপুর, শিলিগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় ৫ হাজার, জলপাইগুড়িতে ৪ হাজার ও দার্জিলিং জেলায় ৩ হাজার পরিবারকে এই উৎসবে শামিল করতে চায় তারা। বঙ্গ সংস্কৃতিকে জুড়তে সেখানে রবীন্দ্রনাথের কবিতা এবং বিবেকানন্দ ও নেতাজির লেখা পাঠ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সঙ্ঘের উত্তরবঙ্গ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তরুণকুমার পণ্ডিত বলেন, ‘‘সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সেই কর্মসূচি পালন করবেন।’’
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, শিবাজির নেতৃত্বেই তৈরি হয় মরাঠা সেনাদের বাহিনী। তারা দীর্ঘদিন দেশ জুড়ে লুঠতরাজ চালিয়েছে। বর্গী হিসেবে এরা পরিচিত ছিল। সতেরোশো এবং আঠারোশো শতাব্দীর বাংলায় এরা ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। শুধু লুঠতরাজই নয়, ইতিহাসবিদেরা বলেন, এরা গ্রাম কে গ্রাম জ্বালিয়ে চলে যেত। ‘ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে/ বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কীসে’, এই ধরনের ছড়া ও কাব্যকাহিনি সেই সময়ে তৈরি হয়েছে।