গোর্খাল্যান্ড নিয়ে মোর্চার আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবনকুমার চামলিঙ। কিন্তু টানা সেই আন্দোলনের আঁচে সিকিমের বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষের জীবনও যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সে কথাও কবুল করলেন চামলিঙ। তবে তার দায় তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপরেই চাপিয়ে দিয়েছেন। প্রতিকারের জন্য তাঁর নজর সুপ্রিম কোর্টের দিকে।
সরকারি সূত্রের খবর, বুধবার জোরথাং লাগোয়া চিসোপানিতে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে চামলিঙ দাবি করেছেন গত তিন দশক ধরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের জেরে সিকিমের প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, সমতল (শিলিগুড়ি) থেকে সিকিমে আনাজ-পেট্রোল অবধি আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর পরেই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুমকি দেন চামলিঙ।
২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টই নির্দেশ দিয়েছিল, কোনও অবস্থাতেই সিকিমের ‘লাইফ লাইন’ তথা ৩১ এ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ করা যাবে না। সিকিমের দাবি, সেই সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরই। সিকিম সরকারের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের জন্য সেই নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটছে। তিনি সরাসরিই জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এমনকী, শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্সেও সিকিমের গাড়ি আক্রান্ত হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।
ঘটনা হলো খোদ চামলিঙ-ই গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সরাসরি সমর্থন জানিয়ে গত ২০ জুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকায়। তার কিছু দিন পরেই বাঙালি পর্যটকদের সিকিম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে চাউর হয়। এ রাজ্য থেকে সিকিমে যাওয়া গাড়ির উপরে হামলা হয় বলেও অভিযোগ। পরে শিলিগুড়িতে সিকিমগামী বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। আনাজ বোঝাই সিকিমের গাড়ি আটকে দেওয়া হয় ধূপগুড়িতেও। তার জেরেই আনাজ, পেট্রোল-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় যে সব সরঞ্জাম শিলিগুড়ি তথা সমতল হয়ে সিকিমে যায়, সেগুলির সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের মন্তব্য, ‘‘সীমান্তে খুবই স্পর্শকাতর রাজ্য সিকিম। আমরা চাই সিকিমে সব পণ্য চলাচল স্বাভাবিক হোক। আমার অনুরোধ, প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গোর্খাল্যান্ডের দাবি সমর্থন না করে বরং দার্জিলিঙের আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করুন চামলিঙ।’’