পুর আইন ভাঙায় অভিযুক্ত মেয়রই

পুর আইন ভাঙার অভিযোগ উঠল প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেই। বাসিন্দাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে পুরসভার তরফে ভাষা শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৪
Share:

ভাষা শহিদ স্মৃতি স্তম্ভের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক অশ্রু কুমার শিকদার। নিজস্ব চিত্র।

পুর আইন ভাঙার অভিযোগ উঠল প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেই। বাসিন্দাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে পুরসভার তরফে ভাষা শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তা নিয়েই ওই অভিযোগ উঠেছে। রবিবার শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে ওই প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠান হয়। সেখানে মেয়র বলেছেন, ‘‘১০ লক্ষ টাকা খরচে এক বছরের মধ্যে ওই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হবে। তবে পুরসভার আর্থিক পরিস্থিতি যে হেতু ভাল নয়, সে জন্য শুভান্যুধ্যায়ীদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেবে পুরসভা।’’ বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পুরসভা এ ভাবে কাজ করতে পারে না বলে বিরোধীরা দাবি করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ওই কাজের জন্য চাঁদা তুললে তার হিসাবই বা কে রাখবে? পুর দফতরের অনুমোদন ছাড়া এ ভাবে বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা তোলা অবৈধ বলে বিরোধীরা দাবি করেছেন।

Advertisement

পুরসভার শিক্ষা, সংস্কৃতি বিভাগের মেয়র পারিষদ শঙ্কর ঘোষ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই প্রকল্পের জন্য বাসিন্দাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিতে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। কিন্তু পুরসভারই একটি সূত্র জানিয়েছে, মেয়রের ত্রাণ তহবিলের জন্য অলাদা অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে, বাসিন্দাদের কাছ থেকে যে পুরকর পুরসভা নেয় তা কর্তৃপক্ষ বাড়াতে পারেন, কিন্তু কোনও কাজের জন্য এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা তোলার কোনও নিয়ম নেই।

পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া জানিয়েছেন, শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে ঠিক কী করা হচ্ছে, তিনি এখনও জানেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তিনি দেখবেন। মেয়রের দাবি, ‘‘পুর আইনে রয়েছে পুরসভা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যে কোনও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। শিলিগুড়ি পুরসভার এ ধরনের ৬০টিরও বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরসভার যে অ্যাকাউন্টটি খোলা হবে, সেটি ভাষা শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির উদ্দেশ্যেই।’’

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুরসভার অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিরোধী তৃণমূলের কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল। তিনি বলেন, ‘‘সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই অ্যাকাউন্টস কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। তা ছাড়া আগেও পুরসভার তরফে যে সব সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে সে সব কোন খাতের টাকা থেকে খরচ করা হয়েছে, তা জানতে চাইব। সঠিক জবাব না পেলে রাজ্য পুর দফতরকে জানানো হবে।’’

এ ভাবে টাকা তুলে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে দেখে মেয়র জানান, পুরসভা থেকেই টাকা দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দরকার না হলে বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হবে না। তবে তাঁরা চাইছিলেন এ ধরনের কাজে বাসিন্দারাও অংশগ্রহণ করুক। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি নাট্যমেলা কমিটি ইতিমধ্যেই ওই কাজের জন্য ৫ হাজার টাকার চেক দিয়েছে। কী ভাবে ওই টাকা নেওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কখনও মেয়র জানিয়েছেন, সাংসদদের কাছেও সাহায্য চাওয়া হবে। যদি এ ধরনের কাজে তাদের তহবিল থেকে টাকা দেওয়া নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে নিজেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এ দিন, বাঘা যতীন পার্কে ওই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন সাহিত্যিক অশ্রুকুমার সিকদার। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সিনিয়র স্টাফ কোর্স অন এডুকেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট-এর অধীনে এ দেশে আসা সেখানকার শিক্ষক-অধ্যাপকদের ৩৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল। পুরসভার বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল বলেছেন, ‘‘শহিদদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার বিষয়টি ভাল। কিন্ত মেয়র বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত না-নিয়ে ওই কাজের জন্য টাকা তোলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, এটা ঠিক নয়। তা ছাড়া, পুরসভা এ ভাবে টাকা তুলতে পারে না। মনে রাখতে হবে, পুরসভা কোনও রাজনৈতিক দল নয়। যারা টাকা দেবেন, তাঁরা পুরসভার কাছ থেকে কিছু সুযোগ চাইবেন। মেয়রের যা মনে হচ্ছে খুশি মতো তিনি করে যাচ্ছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন