সিঙ্গুর রায় শুনে তৃণমূলের মিছিল শিলিগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র।
বাম জমানায় অধিগ্রহণ করা সিঙ্গুরের জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উৎসাহী শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে কাওয়াখালি উপনগরী প্রকল্পের অনিচ্ছুক জমির মালিকেরাও। বাম জমানাতেই তাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত দেওয়ার কথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ জমি এখনও তাঁরা না-পাওয়ায় হতাশ। এই পরিস্থিতিতে বুধবার সিঙ্গুরের রায় কাওয়াখালির জমি দ্রুত ফেরত মেলার দাবিতে সেখানকার অনিচ্ছুক জমির মালিকদের ফের উৎসাহী করেছে। তাঁদের দাবি, সিঙ্গুরের চাষিরা জমি ফেরত পাবেন, সেটা খুবই ভাল ব্যাপার। তার আগে তাঁদের জমি ফেরত পাওয়া উচিত। কেন না, সিঙ্গুরের জমি শিল্পপতিদের হাতে রয়েছে। আর কাওয়াখালির জমি এসজেডিএ তথা রাজ্য সরকারের হাতে।
এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কাওয়াখালির অনিচ্ছুক জমির মালিকেরা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের বিষয়টি সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তার উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে।’’
এসজেডিএ’র একটি সূত্রই জানিয়েছে, ২০০৪ সালে কাওয়াখালি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ করতে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। বছরখানেক পর অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। থিকনিকাটা কাওয়াখালি ল্যান্ড ওনার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির তরফে আন্দোলন গড়ে তোলেন অনিচ্ছুক জমি মালিকেরা। এর পাশাপাশি ওই এলাকায় হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে যে হাটটি রয়েছে, সেই জায়গাটিও ফেরত চান তাঁরা। ২০০৫ সালে হাইকোর্টে মামলা করলে অনিচ্ছুকদের পক্ষে রায় যায়। এর পর ডিভিশন বেঞ্চে যায় এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। তাতে অনিচ্ছুক জমির মালিকেরা হেরে যান। ফের তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাতেও রায় তাঁদের পক্ষে যায়নি।
তত দিনে তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ কৃষি জমি জীবন ও জীবিকা রক্ষা কমিটির ছাতার তলায় আন্দোলন শুরু করেন অনিচ্ছুক জমির মালিকেরা। ওই সংগঠনের কোর কমিটির দায়িত্বে ছিলেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের পর কাওয়াখালির অনিচ্ছুক জমির মালিকদের জায়গা ফেরত দেওয়ার কথা জানানো হয়। থিকনিকাটা কাওয়াখালি ল্যান্ড ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মণিমোহন বিশ্বাস বলেন, ‘‘গৌতম দেব এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান থাকার সময় জমি ফেরত দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। জমি ফেরত দেওয়া হবে জানানোয় আমরাও পরবর্তীতে আর আদালতে যাইনি। এসজেডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যানও আমাদের জমি ফেরত মেলার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হবেন বলে আশা করছি। রাজ্য সরকারের হাতেই জমি রয়েছে। সিঙ্গুরের জমি তিন মাসের মধ্যে ফেরত হলে আমাদের জমি ১৫ দিনের মধ্যে মেলা উচিত।’’ তৎকালীন এসজেডিএ’র সদস্য তথা তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্না অগ্রবাল জানান, এসজেডিএ’র তরফে কাওয়াখালির অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। তা দ্রুত ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।