নয়া ইনিংস শুরু সৌরভের

দুর্নীতি রুখতে তৎপর

এতদিন যা হওয়ার হয়েছে, আপাতত সব প্রকল্পের বিল মেটানো বন্ধ রাখতে হবে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম বৈঠকে এমনই নির্দেশ দিলেন সৌরভ চক্রবর্তী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৭:৪০
Share:

শিলিগুড়িতে এসজেডিএ দফতরে নয়া চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীকে সংবর্ধনা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

এতদিন যা হওয়ার হয়েছে, আপাতত সব প্রকল্পের বিল মেটানো বন্ধ রাখতে হবে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম বৈঠকে এমনই নির্দেশ দিলেন সৌরভ চক্রবর্তী। আলিপুরদুয়ার বিধায়ক সৌরভবাবু আধিকারিকদের জানিয়েছেন, প্রথমেই তিনি এসজেডিএ-এর চলতে থাকা সব প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করবেন। বিশেষজ্ঞের দিয়ে কাজের মান সহ সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া যাচাই করানোর পরেই প্রকল্পের অন্তর্বর্তী অথবা কিস্তিতে বিল মেটানো শুরু হবে। এবার থেকে সংস্থার ছোট-বড় যাবতীয় প্রকল্প ই-টেন্ডারের মাধ্যমেই হবে বলে এ দিন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Advertisement

তৃণমূল জমানায় এসজেডিএ-তে বহু কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকারই। সংস্থার চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল শিলিগুড়ির প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। সে সময়ে দেখা গিয়েছিল, বহু প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি অথচ কয়েক কোটি টাকা বিল মিটিয়ে দিয়েছে এসজেডিএ। অনিয়মের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন সংস্থার প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণকুমার, ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল, ঠিকাদার শঙ্কর পাল, সুব্রত দত্ত, অজয় মৈত্র সহ ১১ জন। পরে সকলেই জামিনে মুক্তি পান। সেই মামলা এখনও চলছে।

অভিযোগ কয়েকজন অভিযুক্ত ঠিকাদার বেনামে এসজেডিএ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে কাজ করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের জেলা স্তরের এক নেতাও বেনামে এসজেডিএতে বড় মাপের ঠিকাদারিতে অংশীদার হিসেবে কাজ করেন বলেও অভিযোগ পৌঁছেছে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে। কোনও অভিযোগই যে উড়িয়ে দেওয়া হবে না সেটাই এদিন স্পষ্ট করে দেন সৌরভবাবু।

Advertisement

শনিবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে সৌরভবাবুর প্রথম বৈঠকেই দফতরের আধিকারিকদের বার্তা দিয়ে বুঝিয়েছেন, কাজকর্মে এক ইঞ্চিও আর্থিক বিচ্যুতি বরদাস্ত করা হবে না। এ দিনের বৈঠকের পরে শিলিগুড়ির এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘এসজেডিএতে শুদ্ধিকরণ অভিযান চালানোর জন্যই মুখ্যমন্ত্রী সৌরভবাবুকে বেছেছেন।’’

সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই সৌরভবাবু বলেন, ‘এসজেডিএ-এর কাজে গতি এবং সততা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই নির্দেশ মাথায় রেখেই সবাইকে কাজ করতে হবে।’’

বস্তুত এ দিন প্রথমেই নিজের চেম্বারে সংস্থার সিইও আর বিমলাকে ডেকে নিয়ে সৌরভবাবু দুর্নীতি সংক্রান্ত সব নথিপত্র চেয়েছেন। কোন প্রকল্পের অভিযোগের তদন্ত কারা করছে, কোন সংস্থা কালো তালিকাভুক্ত সব জেনে নেন। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্প মিলিয়ে সংস্থার প্রায় একশো কোটির টাকার কাজ চলছে বলে সৌরভবাবু জানতে পারেন। আরও একশো কোটি টাকার কাজ শুরুর মুখে বলেও সৌরভবাবুকে জানানো হয়। তখনই সৌরভবাবু বলেন, ‘‘আপাতত চলতে থাকা সব প্রকল্পের বিল মেটানো বন্ধ রাখুন। নতুন একটি কাজও ই-টেন্ডার ছাড়া করবেন না।’’

পরে সৌরভবাবু সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘প্রকল্পের কাজ যত ছোটই হোক না কেন ই-টেন্ডার ছাড়া হবে না বলে নির্দেশ দিয়েছি। দফতরের আধিকারিকরা আমাকে জানিয়েছেন এতদিন ই-টেন্ডার হয়েছে, আবার ই-টেন্ডার ছাড়াও কিছু কাজ হয়েছে। এখন আর সে সব কিছু হবে না।’’

চালু প্রকল্পের কাজে বিল মেটানো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও সমস্যা হবে না বলে সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পরেই সৌরভবাবু ফের একটি বৈঠক করে প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন এবং যাচাইয়ের কাজ শুরু করবেন।

জলপাইগুড়িতে এসজেডিএ-এর অফিস ঢেলে সাজার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। শনিবার শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) সিইও আর বিমলার সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই জলপাইগুড়িতে সংস্থার অফিস নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। জলপাইগুড়ির অফিসে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ হচ্ছে না শুনে দ্রুত পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এতদিন জলপাইগুড়ির অফিসে একজন সহকারী বাস্তুকার পদমর্যাদার আধিকারিক বসতেন। এবার থেকে জলপাইগুড়ির অফিসে সংস্থার শীর্ষ আধিকারিক এবং চেয়ারম্যানের বসার পরিকাঠামো তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন সৌরভবাবু।

আগামী সপ্তাহেই জলপাইগুড়ি অফিস এবং সেখানকার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও নয়া চেয়ারম্যান পরিদর্শন করবেন বলে জানা গিয়েছে। এবার থেকে সংস্থার কাজে জলপাইগুড়ি অগ্রাধিকার পাবে বলেও জানিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘দুই শহরের উন্নয়নেই জোয়ার আসবে। শিলিগুড়ির সব ওয়ার্ডে ঘুরে কোথায় কী কাজ প্রয়োজন তা দেখব। বিশিষ্টজনেদের সঙ্গে কথা বলব। সংস্থার কাজে অগ্রাধিকার পাবে জলপাইগুড়িও।’’

সৌরভবাবুর এই ঘোষণায় স্বভাবতই খুশির হাওয়া জলপাইগুড়িতে। এসজেডিএ-এর কাজে জলপাইগুড়িকে বঞ্চনার অভিযোগ বাম আমল থেকেই। গত বিধানসভায় তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে এসজেডিএ-এর বোর্ডে জলপাইগুড়ি শহরের কোনও জনপ্রতিনিধি না থাকায় তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল শহরে।

এসজেডিএ-এর হাসপাতাল পাড়ার অফিস থেকে নাম ফলক খুলে ফেলেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। দাবি উঠেছিল পৃথক জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার। বস্তুত জলপাইগুড়ির যে অফিস থেকে এসজেডিএ-এর সাইনবোর্ড নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সংস্থার নতুন চেয়ারম্যান হয়ে সৌরভবাবু প্রথম বৈঠকে সেই অফিসকেই ঢেলে সাজার নির্দেশ দিয়েছেন।

বর্তমানে জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দিঘি সংস্কার করা এবং সৌন্দর্যায়নের প্রকল্প চলছে। সেই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি পুরসভার থেকে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবও চেয়েছেন সৌরভবাবু। জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি শহরের মাঝামাঝি কোনও এলাকায় উপনগরী তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী এসে সেই ঘোষণা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন সৌরভবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী উত্তবঙ্গে এসে প্রশাসনিক বৈঠকে এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তখনই ঘোষণা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন