যানজটে আটকে পড়েছে স্কুলবাস। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
পনেরো কিলোমিটার পথ পার হতে ছ’ঘণ্টা লাগতে পারে, কাল পর্যন্ত এ কথা শুনলে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু শুক্রবার যে অভিজ্ঞতা হল, তাকে এখনও দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। ক্যুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেল বহন করার গাড়ি চালাই। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতেই হয়। তাই হাতে কিছুটা সময় রেখেই রওনা দিই। শুক্রবার সকালেও তাই করেছিলাম।
সকাল সাড়ে এগারোটার মধ্যে ফুলবাড়ি গুদাম থেকে পার্সেল নিয়ে মাটিগাড়ার শপিং মলে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ ছিল। মাত্র পনেরো কিলোমিটারের রাস্তা। হাতে বেশ কিছুটা সময় রেখেই, সকাল সাড়ে দশটার সময় ফুলবাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলাম। প্রথম বাধা এল মহানন্দা সেতুর কাছে বর্ধমান রোড এবং হিলকার্ট রোডের মোড়ে।
পুলিশ গাড়ি আটকে দিল। জানাল, মাল্লাগুড়ির রাস্তা দিয়ে মাটিগাড়া যাওয়া যাবে না। প্রথমে ভেবেছিলাম, কিছু পরেই রাস্তা খুলে দেবে। তাই অপেক্ষাও করলাম। এক পুলিশ কর্মী জানালেন দুপুর একটায় নাকি কোনও মিছিল হবে, ততক্ষণ রাস্তা আটকানো থাকবে। ঘড়িতে তখন মাত্র এগারোটা। এতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে! অগত্যা গাড়ি ঘোরালাম। ঘুরপথে গাড়ি নিয়ে মাটিগাড়ার দিকে যেতে শুরু করলাম।
ঝংকার মোড়, টুম্বা জোত, খাপ্রাইল মোড় হয়ে জাতীয় সড়কে উঠলাম। কিছুটা দূরেই শপিং মল। কিন্তু জাতীয় সড়ক জুড়ে তো শুধু গাড়ির লাইন! যাব কী করে? সামনে দাঁড়ানো কয়েক জন পুলিশ গাড়ি থামিয়ে দিলেন। সামনে গার্ড রেল টেনে রাস্তা বন্ধ। আমার গন্তব্য আর পাঁচশো মিটার দূরে। পুলিশদের অনুরোধ করে বললাম, মাল্লাগুড়ি পর্যন্ত যাব না, তাঁর আগেই শপিং মলে ঢুকব। এগোতেই দিল না।
ঘড়িতে তখন সাড়ে বারোটা। অপেক্ষা করেই চলছি। একঘণ্টা কাটল, দু’ঘণ্টাও। মিছিলও আসে না, আমাদের যেতেও দেওয়া হয় না। ঘনঘন অফিস থেকে ফোন আসছে। এ দিকে লাইনে তখন চলে এসেছে স্কুলবাসও। রোদের তেজ বাড়ছে, বাসের ভিতর পড়ুয়ারা কষ্ট পাচ্ছে। সব দেখেও পুলিশ গাড়ি আটকে রেখেছে। ধৈর্য রাখতে পারলাম না।
এক পুলিশ অফিসারকে বললাম, কত মিছিলই তো হয়। এ ভাবে গাড়ি আটকানো হয় না। প্রশ্ন করলাম, ‘‘কখন মিছিল শুরু হবে, তার জন্য আমাদের কেন ভুগতে হবে?’’ এ কথা শুনেই তেড়ে এলেন পুলিশ কর্মীরা। আমাকে জেলে পুরে দেওয়ার হুমকি দিল। এক জন ধাক্কা দিয়ে সরিয়েও দিল। পুলিশই যেখানে ভয় দেখাচ্ছে, তখন কোথায় নালিশ জানাতে যাব?