Sonali Bibi

সপুত্র ভারতে ফিরলেন বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া সোনালি, অন্তঃসত্ত্বাকে ভর্তি করানো হল হাসপাতালে

গত ২০ অগস্ট সোনালি-সহ ছ’জনকে ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর মডেল থানার পুলিশ। তার পরে সকলের জায়গা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে। উদ্বেগ ছিল সোনালি বিবির গর্ভাবস্থা নিয়ে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৪০
Share:

অবশেষে বাড়ির পথে সোনালি বিবি এবং তাঁর সন্তান। —নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘ টানাপড়েনের পর অবশেষে দেশের মাটিতে ফিরলেন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা সোনালি বিবি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারত-বাংলাদেশের মালদহ সীমান্ত দিয়ে আট বছরের ছেলেকে নিয়ে দেশে ফেরেন অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলা। তবে এখনও পরিবারের চার জন বাংলাদেশে রয়েছেন। তাঁদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছে তৃণমূল।

Advertisement

পরনে বোরখা। আবির রঙের একটি চাদর গায়ে। সোনালিকে যখন মালদহ সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করানো হয়, তখন সূর্য পাটে গিয়েছে। আট বছরের ছেলে মায়ের হাত ধরে। তাঁদের ঘিরে প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ। ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশের পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বিএসএফের শিবিরে। সেখান থেকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে।

কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা মহিলাটি তাঁর পুত্রকে নিয়ে ফিরে এলেও তাঁর পরিবারের আরও চার জন বাংলাদেশে রয়ে গিয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মালদহের জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মণ ঘোষ। সোনালিকে যখন মালদহে আনা হয়, তিনি ছিলেন ঘটনাস্থলে। ওই জনপ্রতিনিধির কথায়, ‘‘আমাদের দুই নাগরিককে ছাড়ানো হয়েছে। ডেপুটি হাই কমিশনারকে (ভারতের) জিজ্ঞাসা করলাম, আর চার জন কই? তিনি জবাব না-দিয়ে পালিয়ে গেলেন। আমরা চাই দ্রুত তাঁদের ছাড়া হোক।’’ তাঁর সংযোজন, এই মানুষগুলির সঙ্গে বেইমানি করেছে কেন্দ্র। একই পরিবারের দু’জন যখন প্রমাণিত হলেন, তাঁরা বীরভূমবাসী, তাঁরা ভারতী। তখন তাঁর বাড়ির আর চার জনকে ছাড়া হল না? কোনও জবাব না দিয়ে ডেপুটি হাই কমিশনার বাংলাদেশ চলে গেলেন।’’

Advertisement

গত জুন মাসে সোনালি বিবি-সহ ৬ জনকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে দিল্লি থেকে ধরেছিল পুলিশ। ‘পুশ ব্যাক’ করার সময়েই সোনালি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। অন্য দিকে, ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসাবে গত ২০ অগস্ট সোনালি-সহ ছ’জনকে ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর মডেল থানার পুলিশ। তার পরে সকলের জায়গা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে। উদ্বেগ ছিল সোনালির গর্ভাবস্থা নিয়ে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু, কেন্দ্র তা না-মানায় হাই কোর্ট আদালত অবমাননার মামলা করার নির্দেশ দেয়। যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কেন্দ্র। রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম লড়াই করেছিলেন।

ঘটনাক্রমে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের সোনালি বিবি এবং তাঁর আট বছরের সন্তানকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে গত বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনার পরে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ ভারতের নাগরিক কি না, তা যাচাই করার জন্য কেন্দ্রের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। এখন সোনালির স্বামী দানিশ শেখ, সুইটি বিবি ও তাঁর দুই নাবালক সন্তানকেও একসঙ্গে ফেরানো উচিত ছিল বলে দাবি তুলেছে তৃণমূল।

শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, সোনালির শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হচ্ছে। সোনালির রাজ্যে ফেরা নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও গত দু’দিন ধরে কেন্দ্র ওঁদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়নি। আজ (শুক্রবার) আবার আমাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে উত্থাপন করতে হয়েছে। তার পরেই ওঁদের দেশে ফেরানো সম্ভব হল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই দরিদ্র ভারতীয় নাগরিককে ঘরে ফিরিয়ে আনতে যাঁরা পাশে দাঁড়িয়েছেন, সকলকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওই গরিব মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে আইনি লড়াইয়ে নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা জুগিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement