নিজস্বী: দোলের আগের দিনই অবশ্য মালদহ কলেজে রং খেলার উন্মাদনা। নিজস্ব চিত্র
দোল নয়, হোলির দিন রঙের উৎসবে মেতে উঠেন মালদহবাসী। এক দশক ধরে শান্তিনিকেতনের আদলে শুধু ইংরেজবাজার শহরেই পালিত হচ্ছে দোল উৎসব। তবে হোলিতে শহর হোক বা গ্রাম সর্বত্রই হয়ে ওঠে রঙিন। সেই সঙ্গে রং খেলার ধরনেও বদল এসেছে। খোল, করতালের পরিবর্তে এসেছে বাজনা, অত্যাধুনিক বক্স। রঙের উৎসব সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে তৎপর জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “মোবাইল ভ্যান, টহলদারি ভ্যান নজরদারি চালাবে। সাদা পোশাকের পুলিশও টহলদারি চালাবে।”
কেন মালদহে এক দিন পরে পালিত হয় দোল উৎসব? ১৮১৩ সালের দিকে মালদহ ছিল বিহারের পূর্ণিয়া জেলার অর্ন্তগত। এখন পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিহারের সংস্কৃতি থেকে গিয়েছে। তাই দোল পূর্ণিমাকে ‘দেব-দোল’ হিসেবে ধরা হয়। আর তার পরের দিন হয় ‘মানুষ-দোল’। তাই হোলির দিনই রঙের উৎসবে মানুষ মেতে উঠেন বলে জানান সাহিত্যিক তুষারকান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, “ষোড়োশ শতক থেকে এখানে দোল উৎসব চলে আসছে বলে অনেকে মনে করেন। মদনমোহন মন্দির, নাট মন্দির, অষ্টসখী কুণ্ডও তৈরি করা হয়েছিল।”
ষাট থেকে সত্তর দশকে রং, আবির সব বাড়িতেই তৈরি করা হতো। আলুর নরম অংশ খুঁড়ে নিয়ে তার উপরে মোমের প্রলেপ দিয়ে পুড়ে দেওয়া হত রঙ। পথচলতি মানুষদের তাই ছুড়ে দিত কচিকাঁচারা। এ ছাড়া বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো পিচকিরি। শুধু রংই নয়, তৈরি করা হতো আবিরও। কলা গাছ কেটে রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তার ছাইয়ের সঙ্গে লাল রং, খড়িমাটি মিশিয়ে তৈরি করা হতো আবির। তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। হোলির দিনে রং, আবির নিয়ে রাস্তায় খোল-করতাল সহযোগে ভ্রমণ করত আট থেকে আশি সকলেই।
তবে এখন বাজার থেকে লাল, সবুজ রং-আবির কিনে পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠছে সকলে। সঙ্গে অত্যাধুনিক সাউন্ড বক্স নিয়ে অলি- গলিতে চলে নাচানাচি, হই-হুলোড়। প্রসেনজিৎ সিংহ, প্রবীর দাসেরা বলেন, “এদিক-ওদিক না ঘুরে এক জায়গায় আনন্দ করাই ভাল।”
হোলির দিন রঙের উৎসবে মেতে উঠলেও দোলের দিন থাকে সাদামাটা। যদিও বদল এসেছে শহরে। বাউল শিল্পী তপন পণ্ডিত বলেন, “শুভঙ্কর শিশু উদ্যানে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তাই দোলের সকাল এক দশক ধরে বাহারি আবিরে রঙে উঠছে শহর।”