মিঠুন, গণেশের খাঁচাও পোক্ত তো, নড়ল টনক

রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ অবশ্য বলেন, “সেন্ট্রাল জু অথরিটির নির্দেশ মেনে ওই চিতাবাঘ আবাসস্থলের পরিকাঠামো করা হয়। অন্য দুই এলাকার পরিস্থিতি ঠিক আছে। তবু আধিকারিকেরা সবটা ভাল করে খতিয়ে দেখছেন। প্রয়োজন হলে সেখানে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৪
Share:

রসিকবিল। ফাইল চিত্র।

সচিন বেপাত্তা। তার জেরেই মিঠুন, গণেশ, গোবিন্দ, গৌরী ও কালীদের ডেরার নিরাপত্তা আদৌ কতটা সুরক্ষিত সেই প্রশ্ন উঠেছে বন-প্রশাসনের অন্দরেই।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের দক্ষিণ খয়েরবাড়ির ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রের আবাসিক মিঠুন, গণেশ, গোবিন্দরা। আর কোচবিহারের রসিকবিল পুনর্বাসন কেন্দ্রের আবাসিক গৌরী, কালী নামের ওই চিতাবাঘেরা। খয়েরবাড়ি থেকেই শিলিগুড়ির সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চিতাবাঘ সচিনকে। যে এখন পলাতক। তার পরেই ‘টনক নড়েছে’ বন দফতরের। দফতর সূত্রের খবর, ওই দুটি এলাকার পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। সচিন-কাণ্ডের জেরে সেখানকার নিরাপত্তার ব্যাপারে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বনকর্তারা। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ অবশ্য বলেন, “সেন্ট্রাল জু অথরিটির নির্দেশ মেনে ওই চিতাবাঘ আবাসস্থলের পরিকাঠামো করা হয়। অন্য দুই এলাকার পরিস্থিতি ঠিক আছে। তবু আধিকারিকেরা সবটা ভাল করে খতিয়ে দেখছেন। প্রয়োজন হলে সেখানে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”

বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে বেঙ্গল সাফারি পার্ক চালু হওয়ার আগে রসিকবিল ও দক্ষিণ খয়েরবাড়িই ছিল চিতাবাঘের পুনর্বাসন কেন্দ্র। একসময় রসিকবিলে পাঁচটি চিতাবাঘ ছিল। বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা এড়ানোর সঙ্গে সেন্ট্রাল জু অথরিটির বিধিনিষেধের জেরে সেখানকার চিতাবাঘ স্থানান্তর করা হয়। এখন সাকুল্যে রসিকবিলের আবাসিক ওই দুটি মাদি চিতাবাঘ। দক্ষিণ খয়েরবাড়ি পুনর্বাসন কেন্দ্রে এখন ৮টি চিতাবাঘ রয়েছে। তারমধ্যে মিঠুন, গণেশ, গোবিন্দের নামকরণ হয়েছে। একটি মাদি ও তিনটি পুরুষ চিতাবাঘের অবশ্য এখনও নামকরণ হয়নি। তাদের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তা বেড়েছে।

Advertisement

দফতরের কর্মীদের একাংশের দাবি, দুটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের ঘেরাটোপই প্রায় ১৮ ফুট উঁচু। বিদ্যুতের ফেন্সিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে দু’টি এলাকার বিস্তীর্ণ অংশের তারজালির ঘেরাটোপ অনেক দিনের পুরানো। তা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখা হলে ভাল হয় বলে মানছেন বনকর্মীদের অনেকেই। ওই আশঙ্কার কথা মানছেন পরিবেশপ্রেমীরাও। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “অনেকদিন আগে ওই দুটি কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। তারজালির অবস্থা কেমন তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। সতর্কতাও বাড়াতে হবে।” ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “পরিকাঠামো উন্নত করা শুধু নয়, নজরদারির খামতি মেটানো দরকার। না হলে ফের এমন আশঙ্কাও থেকেই যায়।” বাসিন্দারাও চিতাবাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করার পক্ষে। তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি স্বপন সাহা বলেন, “প্রচুর পর্যটক রসিকবিলে আসেন। তাই কোনও খামতি আছে কি না তা যাচাই করা দরকার।” বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বিদ্যুতের ফেন্সিং নামে থাকলেও মাঝেমধ্যেই তা অকেজো থাকে। চিতাবাঘের বেয়ে ওঠার জন্য গাছও রয়েছে।

বনকর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, দু’টি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চিতাবাঘেরা ভালভাবেই রয়েছে। তবুও সাবধানতা নিয়ে কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না। কোচবিহার বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “দক্ষিণ খয়েরবাড়ির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। তবু কোনও খামতি আছে কি না দেখা হবে।” কোচবিহারের ডিএফও বিমান বিশ্বাস বলেন, “সিকবিলের যা পরিকাঠামো তাতে আশঙ্কার ব্যাপার নেই। তবু আবার সে সব দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন