অশান্তি তৈরি করতে উস্কানি? উঠছে প্রশ্ন
BJP

হঠাৎ কেন পরপর সালিশি সভা

ঘটনাচক্রে এ বারও বিজেপির দিকে আঙুল। ময়নাগুড়ির ঘটনায় বিজেপি কর্মীদের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২১ ০৭:২৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

পাঁচ দিনে তিনটি সালিশি সভা বসার অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার তিনটি প্রান্তে। রবিবার আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামে, বুধবার জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি এবং পরদিন, বৃহস্পতিবার ফের কুমারগ্রামে। তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের ধরন এবং শাস্তিও প্রায় এক। কোনও এক বধূকে ‘দুশ্চরিত্রা’ অপবাদ দিয়ে হয় জোর করে তাঁর চুল কাটা, অর্ধনগ্ন করে মারধর করা কিংবা এলাকায় ঘোরানো হয়েছে। সব ক’টি ক্ষেত্রেই ভিডিয়ো তুলেছেন সেখানে উপস্থিত কয়েক জন। তিনটি ক্ষেত্রেই ঘটনার পরে এলাকায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তিন গ্রামেই আতঙ্কের ছায়া। আতঙ্কিত সাধারণ বাসিন্দাদের কয়েক জনের প্রশ্ন, “তবে কি কোনও অভিযোগ উঠলে, গ্রামের মাতব্বরেরাই সঙ্গে সঙ্গে বিচার করে সাজা ঘোষণা করবেন?”

Advertisement

পরপর তিনটি গ্রাম্য সালিশি বসা, চটজলদি ‘বিচার’ করে শাস্তিদানের অভিযোগের পর প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ এই প্রবণতা শুরু হল কেন?

এই প্রবণতা উস্কে দিচ্ছে বছর তিনেক আগের পরপর ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির স্মৃতি। ২০১৮ সাল। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল সদ্য জয় পেয়েছে। বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। এই সময়ে হঠাৎই ছেলেধরা ‘গুজবে’ অস্থির হয়ে উঠেছিল জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত। ক্রান্তি এলাকায় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছিল উন্মত্ত জনতা। ফাঁড়ি থেকে শুরু করে পুলিশের গাড়ি, মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়েছিল। মাসখানেক এলাকায় বহিরাগত দেখলেই তেড়ে যেত একাংশ বাসিন্দা। তখন তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি সুকৌশলে অস্থিরতা তৈরির জন্য বাসিন্দাদের উস্কানি দিচ্ছে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে অস্থিরতার সুযোগে নিজেদের মুঠি শক্তিশালী করতে পারে তারা। বিজেপি এই অভিযোগ প্রবল ভাবে অস্বীকার করেছিল।

Advertisement

লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারতে বিজেপিই জিতেছিল। ঘটনাচক্রে এ বারও বিজেপির দিকে আঙুল। ময়নাগুড়ির ঘটনায় বিজেপি কর্মীদের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কুমারগ্রাম এবং ময়নাগুড়ি যে এলাকায় পরপর তিনটে সালিশি হল, তার সব ক’টি বিধানসভাই বিজেপি জিতেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে হারের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গেরুয়া শিবির লাগাতার মনগড়া অভিযোগ করছে। সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিতেই এই অশান্তিও সেই ছকের অংশ নয়তো?

তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, “তৃণমূল সরকারকে হেয় করতে একটা গভীর চক্রান্ত।’’ জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর কথায়, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে— প্রমাণ করতে একটা সুচতুর এবং সুকৌশল চক্রান্ত চলছে।” বিজেপি অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারছে না।” বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে জেলাতে নারীরা সুরক্ষিত নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন