উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করার দাবিতে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়েরই ডাকা এক সভায় সরব হয়েছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী শ্রাবন্তী বসাক। তার পর থেকে তাঁর জন্য শুধুই প্রশংসা ও সাধুবাদ। এ দিন তো বন্ধুদের একাংশ তাঁকে সংবর্ধনাও দিতে চাইলেন। তাদের কাছ থেকে চকোলেটও উপহার পেলেন শ্রাবন্তী।
কেন এত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন শ্রাবন্তী? সকলেই বলছেন, শ্রাবন্তী খুব জোরের সঙ্গে এমন একটা কথা তুলে ধরেছেন, যেটা এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে জরুরি বিষয়। এবং বুদ্ধি করেই বুধবারের মঞ্চ বেছে নিয়েছেন তিনি।
এই অবস্থায় একটাই প্রশ্ন এসে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে— এর পরে কি রাজনীতিতে নামবেন শ্রাবন্তী? যে গীতশ্রী সরকারের সঙ্গে তাঁর তুলনা করা হচ্ছে, তিনি তো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগে দাপটে বামপন্থী রাজনীতি করেছেন। এখনও করছেন।
শ্রাবন্তী অবশ্য তেমন কোনও ইঙ্গিত দেননি। যে বন্ধুরা তাঁকে এ দিন অভিনন্দনের সঙ্গে চকোলেট এগিয়ে দেন, তাঁদের অনেকেই কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সদস্য। কিন্তু শ্রাবন্তীর কথা হল, তিনি এখন এ সবের থেকে দূরে থাকতে চান।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই রমরমা। তারাও শ্রাবন্তীর বিষয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখাচ্ছে না। তাদের কারও কারও বক্তব্য, এই নিয়ে এখনই কিছু ভাবনাচিন্তা নেই তাদের।
এক দিনে প্রায় সেলিব্রিটি হয়ে ওঠা শ্রাবন্তী কিন্তু কাজ না হলে আবার সরব হওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘বন্ধু-বান্ধবীরা অনেকে সংবর্ধনা দিতে চাইছেন। ওদের বলেছি এটা পাওয়ার মতো তো কিছু করিনি। আমরা সকলে মিলেই নিজেদের নিরাপত্তার দাবি, মেয়েরা কী করে নিজেদের আত্মরক্ষা করবে সেই ব্যবস্থা করার দাবি তুলতে পারি। সেটাই বড় ব্যাপার হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সকলে মিলে উপাচার্যকে জানাব, যাতে মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।’’
শ্রাবন্তীর পাশে দাঁড়িয়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, সারা বাংলা কর্মচারী সমিতি সদস্যরাও। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির তরফেও তাঁর প্রশংসা করা হয়। শ্রাবন্তীর সুরে সুর মিলিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমানও দাবি তোলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত গতিতে ব্যবস্থা নিক।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের অনেকেই ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ফের আন্দোলনে নামার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রোনাল্ড দে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যদি সামান্য সচেতন হন তবে ছাত্রীটি সভার মাঝে যে প্রসঙ্গ তুলেছেন, সে ব্যাপারে অবিলম্বে নেবেন।’’ টিএমসিপি-ও উপাচার্যকে একই অনুরোধ জানাবে।