নতুন বাড়ি, ঘোর কাটছে না খুদেদের

মালদহে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র মানেই বেশিরভাগ ভাড়া করা ঘর। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৫৫৭৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ভাড়ার ঘরের সংখ্যা অন্তত ১৭৮০। সে গুলিতে আবার পানীয় জল বা শৌচাগারের কোনও ব্যবস্থাই নেই।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৭
Share:

চকচকে: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নতুন খেলার ঘর। নিজস্ব চিত্র

এ যেন রূপকথার গল্প। এতদিনের পরিচিত ভাঙা নোংরা অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের ছবিটা রাতারাতি বদলে যাওয়ায় রীতিমতো অবাক প্রিয়া, লক্ষ্মী, সুপর্ণা।

Advertisement

মালদহে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র মানেই বেশিরভাগ ভাড়া করা ঘর। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৫৫৭৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ভাড়ার ঘরের সংখ্যা অন্তত ১৭৮০। সে গুলিতে আবার পানীয় জল বা শৌচাগারের কোনও ব্যবস্থাই নেই। রান্নাঘরের অবস্থাও অবর্ণনীয়। সেই কেন্দ্রগুলিতেই শিশুরা পড়ছে, খেলছে, খাচ্ছে। আবার, ভাড়া গুণতে না হলেও প্রায় ২১৫০টি কেন্দ্র চলে কারও বাড়ির ঘরে বা বারান্দায়। পুরনো নিজস্ব ভবন যে কেন্দ্রগুলির রয়েছে সেগুলিরও ভাঙাচোরা। সব ভবনে পানীয় জলেরও ব্যবস্থাও নেই।

পরিস্থিতি বদলাতে হচ্ছে ঝাঁ-চকচকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। যার নাম “শিশু আলয়”। বালা অর্থাৎ বিল্ডিং অ্যাজ লার্নিং এইড- এই মডেলেই তৈরি হচ্ছে সেগুলি। প্রশাসন সূত্রেই খবর, ২০৯টি শিশু আলয় তৈরির কাজ চলছে জেলায়। আরও ২৪৯টি তৈরির অর্থ চেয়ে প্রস্তাব গিয়েছে রাজ্য শিশু ও নারী উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতরে। শনিবার ৫০টির উদ্বোধনও হয়েছে। এ দিন পুরাতন মালদহের মুচিয়ার জামাইপাড়া শিশু আলয়টির উদ্বোধন করেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি সরলা মুর্মু।

Advertisement

এতদিন কেমন ছিল জামাইপাড়ার এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি? গিয়ে দেখা গেল, জামাইপাড়ারই এক প্রান্তে উজ্জ্বল মণ্ডলের পরিত্যক্ত বাড়ির একটি পাকা ঘরে চলছিল সেই কেন্দ্র। বাড়ির চারদিকে এখনও আবর্জনা। জল বা শৌচালয়ের কোনও বালাই নেই সেখানে। সেই কেন্দ্রে আসা শিশু ও মায়েদের রান্না হত ঘরের পাশে চারদিক খোলা বাঁশ আর টিনের একটি শেডের নীচে, মাটিতে পাতা উনুনে। কিন্তু শিশু আলয় উদ্বোধনের পর এ দিন একেবারেই ভোল বদলে গেল সেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের। প্রায় ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে ঝাঁ-চকচকে একটি ভবন তৈরি হয়েছে। রয়েছে বড় একটি ঘর সহ স্টোররুম, রান্নাঘর ও শৌচালয়। পানীয় জলের ব্যবস্থাও রয়েছে। রান্না হবে গ্যাসে।

আলয়ের ঘরটিও সাজানো-গোছানো। শিশুদের লেখাপড়া থেকে খেলার জন্য ঘরে তৈরি হয়েছে চারটি বিভাগ। একটি বিভাগ আঁকার। সেখানে প্রত্যেক শিশুর নামে একটি করে ফাইল ঝোলানো রয়েছে। কেন্দ্রে এসে শিশুরা যা আঁকবে সেগুলি সাজিয়ে রাখা হবে সেই ফাইলে। আঁকার সমস্ত সরঞ্জামও সেখানে রয়েছে। তারপরই রয়েছে বইয়ের বিভাগ। সেখানে শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার যাবতীয় বই রাখা আছে। রয়েছে গল্পেরও বই।

ব্লক বিভাগে সংখ্যা চেনানোর জন্য রয়েছে একাধিক উপকরণ, অ্যাবাকাস ও মডেলও। খেলার জায়গায় যেমন ছোটদের কাছে জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র ছোটাভীম, চুটকির পুতুল রয়েছে তেমনি ঘরে খেলার মতো একাধিক উপকরণও রয়েছে। আর বাইরে হয়েছে ছোটখাটো একটি পার্ক। সেখানে বাহারি ফুলের গাছের পাশাপাশি দোলনা, ক্লাইম্বিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।

এত সব কিছু দেখে এ দিন নয়া এই ভবনে ঢুকে যারপরনাই খুশি লক্ষ্মী চৌধুরী, প্রিয়া চৌধুরি, সুপর্ণা হালদার, লক্ষ্মণ সরকারদের মতো চার-পাঁচ বছরের কচিকাঁচারা। সব মিলিয়েই যেন তাদের উৎসব। এই কেন্দ্রের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী রিনা সরকার বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না যে এমন একটি ঝাঁ-চকচকে বাড়িতে আমাদের কেন্দ্র চলবে।’’ জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা জেলায় সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকেই শিশু আলয় হিসেবে তৈরি করতে চলেছি। যেখানে শিশুদের শুধু পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা থাকবে না, তাঁদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপযুক্ত পরিকাঠামোও থাকবে। ব্যবস্থা হবে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষারও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন