রোগী: সঞ্জয় তিওয়ারি।
পা ভেঙে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময়ে বসানো হয়েছিল একটি স্টিলের পাত। সেটা ছিল ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাস। সেই থেকে ৬ বছর ধরে একাধিকবার পাতটি খুলে দেওয়ার জন্য ওই হাসপাতালে ৮ বার ভর্তি হয়েছেন রোগী সঞ্জয় তিওয়ারি। কখনও এক মাস, আবার কখনও দু’মাস ভর্তি রেখে ছুটি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কিন্তু পাত আর বের করা হয়নি। তাই শনিবার ফের তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা বলতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘‘এ বার একটা হেস্তনেস্ত করে যাব। কতদিন ঘোরানো হবে আমাকে। হয় বলুন পাত নিয়ে সারা জীবন চলতে হবে। না হলে বের করে দিন।’’
এমন টালবাহানার অভিযোগ পৌঁছেছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির কাছে। এ দিনই সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য জরুরি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ সমীর ঘোষরায়, উপাধ্যক্ষ তথা সুপার কৌশিক সমাজদারের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপের নির্দেশ দেন। অস্থি-শল্য বিভাগের চিকিৎসকদেরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তারা। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ উদ্বেগজনক। ওই পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি।’’
চলিশোর্ধ্ব সঞ্জয়ের বাড়ি শিলিগুড়ির কাছে নৌকাঘাটে। জল্পেশে যাওয়ার সময়ে মোটরবাইকের সঙ্গে পিক আপ ভ্যানের ধাক্কায় পা ভেঙে যায় তাঁর। কখনও রিকশা চালিয়ে, কখনও দিনমজুরি করে সংসার চালান। পা ভাঙার পরে ধাক্কা খেয়েছে রোজগার। গত পুজোর আগে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। সে সময়ে বলা হয়, পুজোর পরেই অস্ত্রোপচাকরে পাত বার করা হবে। কিন্তু, এ দিন তাঁকে বলা হয়েছে, আগামী বছরের গোড়ায় ফের আসতে হবে।
কেন এমন টালবাহানা? অস্থি-শল্য বিভাগের প্রধান তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘পাতটি থাকলে যে জটিলতা হবে তা নয়। তবুও অনেক সময় বার করে দেওয়া হয়। কিন্তু, আমাদের ওয়ার্ডে হাত-পা ভাঙার রোগী উপচে পড়ছে। অস্ত্রোপচারে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সোমবারই পদক্ষেপ করব।’’ তবে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত অস্থি শল্য বিশেষজ্ঞ বিদ্যুৎ সরকার জানান, পাত বসানোর পরে তা ২ বছরের মধ্যে বার করা না হলে পরে জটিলতা হতে পারে। তাঁর মতে, ‘‘কারণ, প্লেট অস্থি-মজ্জার মধ্যে এঁটে বসে যায়। স্ক্রু গুলো খোলার সময়ে ভেঙে যেতে পারে।’’
৬ বছর তো হয়েই গিয়েছে। এখন সঞ্জয়ের পায়ের পাতের কী হয় সেটাই দেখার বিষয়।