আগের দিনই সভা সৌরভের

আলিপুরদুয়ারে মিলল শক্তিশালী বোমা

শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়াল আলিপুরদুয়ার শহরে। বুধবার ভোর চারটে নাগাদ শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এলাকার একটি কাঠের ঘরের নীচে সলতে দিয়ে আগুন লাগানো অবস্থায় বোমাটি দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

ভোরে বোমা দেখতে পাওয়ার পরে সুরক্ষাকবচ ছাড়াই পুলিশ আধিকারিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা বালির বস্তা দিয়ে তা ঘিরে রাখার চেষ্টা করছেন। (ডান দিকে) ফাটিয়ে দেওয়ার পরে বোমার ধোঁয়া। নিজস্ব চিত্র।

শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়াল আলিপুরদুয়ার শহরে। বুধবার ভোর চারটে নাগাদ শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এলাকার একটি কাঠের ঘরের নীচে সলতে দিয়ে আগুন লাগানো অবস্থায় বোমাটি দেখা যায়। বোমাটির উপর জল দিয়ে তা পাশের মাঠে রেখে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে দশটা নাগাড সিআইডি ‘বম্ব স্কোয়াড’ বোমাটিতে বিস্ফোরণ ঘটালে কেঁপে ওঠে এলাকা। সপ্লিন্টার ছিটকে বহু দূর পর্যন্ত যায়।

Advertisement

এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীর অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতেই এলাকার অন্য একটি মাঠে সভা করেন তিনি। সেখানকার সিপিএমের কাউন্সিলর সম্প্রতি তৃণমূলে যোগদান করেছেন। ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক যড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে তৃণমূল দাবি করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষ পল্লি এলাকায়, রামকৃষ্ণ সূত্রধর নামে এক ব্যক্তির কাঠের ঘরের নীচে রাখা ছিল বোমাটি। তিনি পেশায় ফেরিওয়ালা। এ দিন ভোর চারটে নাগাদ রামকৃষ্ণের স্ত্রী রুমা সূত্রধর ভোর চারটে নাগাদ ঘুম ভাঙলে ঘরের কাঠের মেঝের ফাঁক দিয়ে লক্ষ করেন নীচে আলো জ্বলছে। রামকৃষ্ণ সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে এসে দেখেন ঘরের নীচে সলতে জাতীয় কিছুতে আগুন জ্বলছে। আর সলতের সামনে বোমাটি রাখা ছিল। বালতি করে জল দিয়ে আগুনটি নেভান তিনি। তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই বোমাটি পাশের মাঠে নিয়ে গিয়ে রাখেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশে।

Advertisement

আলিপুরদুয়ারের জেলা পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ জানান, সকাল আটটা নাগাদ সিআইডি-র বোম্ব স্কোয়াড ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তার আগে দমকল বিভাগ বোমটিকে জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখে। সকাল ন’টা নাগাদ বোম্ব স্কোয়াড এক দফা ওই বোম্বটির উপর বিস্ফোরণ ঘটায়। সেই সময় বোমটিতে পেঁচিয়ে রাখা সুতলি খুলে যায়। ফের বেলা দশটা বেজে কুড়ি মিনিট নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটালে বোম্বটি ফাটে।

ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। বিস্ফোরণ স্থল থেকে উদ্ধার সামগ্রী ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

সিআইডি বোম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা জানান, প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি বিস্ফোরক ছিল বোমটিতে। তার সঙ্গে কাচের টুকরো, পেরেক রাখা ছিল সপ্লিন্টার হিসেবে। বোমটিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর সময় মাটিতে প্রায় এক ফুট গর্ত হয়। বোমটির চারপাশে রাখা বালির বস্তাগুলি বিস্ফোরণের তীব্রতায় পঁচিশ-তিরিশ ফুট দূরে ছিটকে পরে। আশেপাশের বাড়িতে শো-কেসের কাচ ভেঙে যায়। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে, প্লাস্টিকের বড় বয়ামে বারুদ ও পেরেক দিয়ে বোমাটি বানানো হয়। তারপর সেলোটেপ দিয়ে বয়ামটিকে মোড়া হয়েছিল। বিস্ফোরণের পর প্লাস্টিকের বয়ামের টুকরোয় কেরোসিন তেলের গন্ধ মিলেছে।

রামকৃষ্ণ সূত্রধর বলেন, “আমি ভাঙাচোরা জিনিস কেনা বেচার কাজ করি। কে আমার বাড়িতে বোমা রাখবে।” পুলিশ রামকৃষ্ণ ও তাঁর দাদা গণেশ সূত্রধরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাঁদের পুলিশে কোনও রেকর্ড আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রামকৃষ্ণের প্রতিবেশী গোপাল সরকার তৃণমূলের স্থানীয় টোটো ইউনিয়নের নেতা। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে তাঁর ক্ষতি করার জন্য তাঁর শোয়ার ঘর লাগোয়া প্রতিবেশীর বাড়িতে বোমটি রাখা হয়ে থাকতে পারে।

তৃণমূলের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী জানান, কিছু দিন আগেই এলাকার সিপিএমের কাউন্সিলর সাবির সাহা তৃণমূলে এসেছেন। তা ছাড়া গোপাল সরকার এলাকায় তৃণমূলকে নেতৃত্ব দেন। মঙ্গলবার রাতে সৌরভবাবু ওই এলাকায় একটি মাঠে জনসভা করেন। তৃণমূলের দাবি, তাঁদের ক্ষতি করার জন্য বোমাটি রাখা হয়েছিল।

সিপিএমের সদর জোনাল সম্পাদক শিবনাথ সেনগুপ্ত জানান, তৃণমূলের অভিযোগ ভিক্তিহীন। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক কারা বোমাটি সেখানে রেখেছিল।

এ দিন, একাধিক পুলিশ আধিকারিক সহ তৃণমূল নেতাকে দেখা যায় কোন সুরক্ষা কবচ ছাড়াই বারবার বোমাটির কাছে যেতে। এর আগে ১৮ মার্চ আলিপুরদুয়ার শহরে সাইকেল বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় তিন জন। ২০০৯ সালে বিএম ক্লাব ময়দানে সুরক্ষা কবচ ছাড়াঈ বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে মারা যান সিআইডির কর্মী লালবাহাদুর লোহার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন