কংগ্রেসের ঘর ভেঙে শক্তির পরীক্ষা তৃণমূেলর

কংগ্রেসের ঘর ভেঙে পুর বোর্ড দখলের পরে জলপাইগুড়ি শহরে প্রথম শক্তি পরীক্ষার মুখোমুখি শাসকদল তৃণমূল। পুরসভার যে বিদায়ী চেয়ারম্যানকে সামনে রেখে বিগত দিনে কংগ্রেস পুর বোর্ড দখল করে তিনিই এবার ভোটে তৃণমূলের সেনাপতি। তাঁর নেতৃত্বে একক শক্তিতে বোর্ড কি শাসক দলের দখলে যাবে! নাকি স্রোতের বিরুদ্ধে চলতে অভ্যস্ত শহর মুখ ফিরিয়ে কংগ্রেসে আস্থা রাখবে! বামফ্রন্টের শক্তি বাড়বে! রাজনৈতিক শিবিরে শুরু হয়েছে পাটিগণিতের তুল্যমূল্য বিচার বিশ্লেষণ।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৯
Share:

কংগ্রেসের ঘর ভেঙে পুর বোর্ড দখলের পরে জলপাইগুড়ি শহরে প্রথম শক্তি পরীক্ষার মুখোমুখি শাসকদল তৃণমূল। পুরসভার যে বিদায়ী চেয়ারম্যানকে সামনে রেখে বিগত দিনে কংগ্রেস পুর বোর্ড দখল করে তিনিই এবার ভোটে তৃণমূলের সেনাপতি। তাঁর নেতৃত্বে একক শক্তিতে বোর্ড কি শাসক দলের দখলে যাবে! নাকি স্রোতের বিরুদ্ধে চলতে অভ্যস্ত শহর মুখ ফিরিয়ে কংগ্রেসে আস্থা রাখবে! বামফ্রন্টের শক্তি বাড়বে! রাজনৈতিক শিবিরে শুরু হয়েছে পাটিগণিতের তুল্যমূল্য বিচার বিশ্লেষণ।

Advertisement

বৈশাখের কড়া রোদের মতো শহরের চা দোকান, রকের আড্ডায় ভোট চর্চার তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসু। ২০০০ সাল থেকে পুরভোটে তিনি ছিলেন কংগ্রেসের সেনাপতি। ২০১০ সালে বামফ্রন্ট এবং ঘাসফুল শিবিরকে পর্যুদস্ত করে তাঁর নেতৃত্বে ২৫ আসনের পুরসভায় ১৬টি আসন দখল করে ক্ষমতাসীন হয় কংগ্রেস। এবার উল্টো ছবি। বিদায়ী চেয়ারম্যান তৃণমূল শিবিরের সেনাপতি। তিনি কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টকে ধরাশায়ী করার কৌশল নিয়ে ব্যস্ত।

শহরের রাজনৈতিক ক্যানভাসে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শিবির পরিবর্তনের ছবিকে ঘিরে সাধারণ মানুষ অথবা বিরোধীরা তো বটেই। শাসক দলের অন্দরেও তরজা বাড়ছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মোহনবাবু তাঁর পুরনো দল কংগ্রেসের দুর্বলতার দিকগুলি ভাল জানেন। ওই দিক থেকে এবার ভোটে শাসক দল তৃণমূল অনেকটাই লাভবান হবে। আবার অন্য একটি অংশ মনে করছেন, মোহনবাবুকে সামনে রেখে প্রচারে নেমে তৃণমূলকে খেসারত দিতে হতে পারে। তাঁদের যুক্তি, বিদায়ী চেয়ারম্যানের দুর্বলতার দিক কংগ্রেস নেতৃত্বের ভাল জানা রয়েছে।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার থেকে কংগ্রেসের প্রচারে স্পষ্ট। বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসুকে ‘উন্নয়নের কারিগর’ বিশেষণে তুলে ধরে তৃণমূল ফ্লেক্সে শহর ভরে দিতে কংগ্রেস প্রচারকে তীব্র করেছে। পথসভায় প্রশ্ন তুলে ধরা হচ্ছে, যে মোহনবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগ তুলে প্রচারের ঝড় তুলেছিল তৃণমূল। তাঁকে জেলে ঢোকানোর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নয় জন কাউন্সিলারকে নিয়ে দল বদল করতে তিনি ‘উন্নয়নের কারিগর’ হয়ে গেলেন! জেলা তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার বলেন, “বিশ্বাসঘাতকদের কথা বেশি করে প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “বিশ্বাসঘাতকদের জবাব দিয়ে এবার সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন কংগ্রেস দখল করবে।”

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কংগ্রেস শিবিরের আক্রমণকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁদের পাল্টা দাবি এবার পুরসভা বিরোধী শূন্য হবে। যেমন, প্রদেশ তৃণমূল সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “ভোট হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে, ঘাসফুল প্রতীকে। সেখানে বিরোধীরা কি বলছেন তাঁর কোন গুরুত্ব নেই। দলের জয় নিশ্চিত।”

কিন্তু কল্যাণবাবুরা মুখে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় নিশ্চিতের দাবি করলেও দলের অন্দরে নিচু তলার যে কর্মীরা ভোট করছেন তাঁদের মন থেকে আশঙ্কার মেঘ কাটছে না কিছুতে। তাঁদের মতো সাধারণ ভোট দাতারা টের পাচ্ছেন দিন যত এগিয়ে আসছে ততই শাসক দলকে কড়া লড়াইর সামাল দিতে হচ্ছে।

অন্তত দশটি ওয়ার্ডে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইর ছবি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। নয়টি আসনে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে বামফ্রন্ট। বিজেপি দুটি আসনে শাসকদলের সামনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যদিও ওই হিসেবে তেমন সায় নেই জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক সলিল আচার্যের। তিনি বলেন, “বামফ্রন্টের ফলাফল ভাল হবে এটা বুঝতে পারছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন