আত্মবিশ্বাসই সঙ্গী লড়াকু বন্ধনীর

বন্ধনী বলছে, ‘‘শহরের প্রেরণা স্কুলে পড়ার সময় ব্রেইল শিখেছিলাম। এখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। তখন ব্রেইলে পড়তে পারিনি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাহায্য করেছেন বলেই আজ মাধ্যমিকে বসতে পারছি।’’

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার 

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:২৪
Share:

বন্ধনী: বাবার সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

দেখে নয়, ছুঁয়ে পড়া মুখস্থ করে বন্ধনী। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার প্রথম দিন। মঙ্গলবার স্কুলের মাঠে যখন শেষ মুহূর্তের পড়া ঝালিয়ে নিচ্ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। তখন সেখানে দাঁড়িয়েই ব্রেইলে লেখা বই ছুঁয়ে পড়ছিল বন্ধনী।

Advertisement

ছোটবেলা থেকেই চোখে দেখতে পারে না শিবমন্দিরের বন্ধনী। রামকৃষ্ণ সারদামণি বিদ্যাপীঠের ওই ছাত্রীর মাধ্যমিকের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে শিলিগুড়ির মহানন্দা বিদ্যামন্দিরে। এ দিন বাবা মহেশ শাহর সঙ্গে এসেছিল বন্ধনী। সঙ্গে ছিল তার স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী সোহা আলি। সোহা মাধ্যমিকে বন্ধনীর রাইটার।

বন্ধনী বলছে, ‘‘শহরের প্রেরণা স্কুলে পড়ার সময় ব্রেইল শিখেছিলাম। এখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। তখন ব্রেইলে পড়তে পারিনি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাহায্য করেছেন বলেই আজ মাধ্যমিকে বসতে পারছি।’’ বাজারে ব্রেইলে লেখা বই বিশেষ পাওয়া যায় না বলে জানাচ্ছে ওই ছাত্রী। সর্বশিক্ষা মিশন থেকে কেবলমাত্র পাঠ্যবইগুলো পাওয়া যায়। সেগুলোই ভরসা ছিল তার। নোট, অন্য রেফারেন্স বই পড়তে পারেনি বন্ধনী। এ দিন পরীক্ষা দিতে এসে সেই আক্ষেপও করেছে। কিন্তু তাতে দমে যাওয়ার মেয়ে নয় সে।

Advertisement

রামকৃষ্ণ সারদামণি বিদ্যপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুচেতা দত্ত বলেন, ‘‘বন্ধনী অনেক অসুবিধা নিয়ে পড়ছে। আমরা ওকে সবসময় সাহায্য করি। আলাদাভাবে রেকর্ড শুনিয়ে, লিখে দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে।’’

বন্ধনীর বাবা মহেশ শাহর শিবমন্দির মেডিক্যাল মোড়ে একটি আসবাবের দোকান রয়েছে। তাঁর একার আয়েই চলে গোটা সংসার। কষ্ট করেই মেয়ের পড়াশোনা চালান বলে জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, বন্ধনীর এই লড়াইয়ে এলাকার কোনও জনপ্রতিনিধি সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। মহেশবাবুর কথায়, ‘‘কষ্ট তো রয়েইছে। প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও মেয়ের কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি। পঞ্চায়েত থেকেও কেউ বাড়িতে আসেনি সাহায্যের জন্য।’’ শিলিগুড়ি মহানন্দা বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মন্টু মাহাত জানিয়েছেন, বন্ধনীকে সবরকম সাহায্য করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন