পকেটে ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা দাড়িভিটের বিপ্লবের

কিছুটা ভয়, কিছুটা উদ্বেগ ছিলই। কিন্তু হাসিমুখে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ছেলে বেরোতেই আশ্বস্ত হলেন মা। বাইরে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুরুদুরু বুকে। ছেলে কাছে আসতেই মা তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৫
Share:

বিপ্লব: পরীক্ষাকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ ছাত্র। নিজস্ব চিত্র

কিছুটা ভয়, কিছুটা উদ্বেগ ছিলই। কিন্তু হাসিমুখে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ছেলে বেরোতেই আশ্বস্ত হলেন মা। বাইরে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুরুদুরু বুকে। ছেলে কাছে আসতেই মা তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললেন। ছেলেটির জন্য কিছু তরুণও বাইরে অপেক্ষা করছিল। তারাও খুশি।

Advertisement

মঙ্গলবার বন্ধুদের সঙ্গে গাড়ি করেই মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছয় দাড়িভিট-কাণ্ডে গুলিতে আহত বিপ্লব সরকার। ছেলের সঙ্গে এসেছিলেন মা সরস্বতী সরকারও। পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার আগে বিপ্লবের পকেটে ভরে দেন প্রয়োজনীয় ওষুধও। পরীক্ষার শেষে বিপ্লব জানায়, প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা তার ভালই হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিটে গুলি-কাণ্ডের পর থেকেই পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ ও চিন্তায় ছিল বিপ্লব ও তার পরিবার। সেদিন গন্ডগোলের মধ্যে একটা গুলি তার ডান পা ছুঁযে বেরিয়ে যায়। সেই থেকে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি সে। পরীক্ষার ১৫ দিন আগে ফের তার চিকিৎসা করিয়েছে পরিবার। মা তাকে এ বছর পরীক্ষা দিতে বারণ করেছিল। তবে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা কোনও ভাবেই বাদ দিতে চায়নি বিপ্লব।

দাড়িভিট স্কুলের পড়ুয়াদের পরীক্ষা কেন্দ্র পড়েছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের গুঞ্জরিয়ার পাঁচরসিয়া হাইস্কুলে। এবছর দাড়িভিট স্কুলের ২৫৪ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে। এ দিন সাড়ে ১০টা নাগাদ স্কুলের অন্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রে পৌঁছে যায় বিপ্লব। কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে দেরি দেখে মাইকে তার নামও ডাকা হয়। কেন্দ্রে গিয়েছিলেন দাড়িভিট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিল মণ্ডলও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না খতিয়ে দেখতেই স্কুলে এসেছি। বিপ্লবের যাতে কোনও সমস্যা না হয় কেন্দ্রে থাকা শিক্ষকরা তা খেয়াল রেখেছেন।’’

Advertisement

পরীক্ষা শুরুর কিছুদিন আগেই দাড়িভিট-কাণ্ডে আহত বিপ্লবের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেছিল এসএফআই। তাকে পরীক্ষা দিতে ননিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করতে চেয়েছিল তারা। রাজি হয়নি বিপ্লব। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গেই গাড়িভাড়া করে গিয়েছে। তবে এলাকারই অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কয়েকজন সদস্য পাঁচরসিয়ে হাইস্কুলের মাঠে তার পরীক্ষা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল। এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি শুভঙ্কর কর্মকার বলেন, ‘‘বিপ্লবকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সে সহপাঠীদের সঙ্গে যেতেই ইচ্ছুক। তাই আলাদা করে গাড়িভাড়া করা হয়নি।’’

তবে চেয়ারে বসে পরীক্ষা দিতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে। বড় কোনও সমস্যা হয়নি। বিপ্লব জানিয়েছে, ‘‘প্রায় ৭৫ শতাংশ উত্তর করেছি। আহত না হলে পরীক্ষা আরও ভাল হত। ঘটনার পর থেকে তো পড়তে পারিনি। চিকিৎসার জন্য বারবার চেন্নাই যেতে হয়েছে।’’ পরীক্ষার জন্য অস্ত্রোপচার পিছিয়েছে চিকিৎসক। বাকি পরীক্ষাগুলো কেমন হয় তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে। বিপ্লবের মা বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে ছেলে কিছুটা সুস্থ হয়েছে। জীবনের বড় পরীক্ষা দিচ্ছে। ভাল ফল না হলে ভেঙে পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন