চরম অব্যবস্থা জারি প্রতিবন্ধী আবাসিক স্কুলে

ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে আবাসিক স্কুলের পড়ুয়াদের সংখ্যা চল্লিশ। কিন্তু রয়েছে একটি মাত্র শৌচাগার। স্কুলের যে মাঠে ওই শৌচাগার, সেখানে সামান্য বৃষ্টিতেই জমে যায় জল। নেই মিড-ডে-মিল খাওয়ার আলাদা জায়গাও। সব মিলিয়ে কোচবিহারের আখরারহাট দিশারি প্রতিবন্ধী আবাসিক স্কুলে নেই-এর তালিকা বেশ দীর্ঘ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৭
Share:

নেই আলাদা ব্যবস্থা, মিড-ডে মিলের পরে এই বেঞ্চ ধুয়েই ফের চলে পড়াশোনা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে আবাসিক স্কুলের পড়ুয়াদের সংখ্যা চল্লিশ। কিন্তু রয়েছে একটি মাত্র শৌচাগার। স্কুলের যে মাঠে ওই শৌচাগার, সেখানে সামান্য বৃষ্টিতেই জমে যায় জল। নেই মিড-ডে-মিল খাওয়ার আলাদা জায়গাও। সব মিলিয়ে কোচবিহারের আখরারহাট দিশারি প্রতিবন্ধী আবাসিক স্কুলে নেই-এর তালিকা বেশ দীর্ঘ।

Advertisement

ওই প্রতিবন্ধী আবাসিক স্কুলের মূক ও বধির ছাত্রছাত্রীদের দিন কাটে চরম দুর্বস্থার মধ্যে। বৃষ্টি হলে মাঠে জল ভেঙে একটি মাত্র শৌচাগারের সামনে পড়ে চল্লিশ জনের লাইন। তারপরে কোনওরকমে নাওয়াখাওয়া সেরে সবাই হাজির হয় ক্লাসরুমে। দুপুরের মিড-ডে মিলের জন্য স্কুলে ব্যবস্থা নেই কোনও পৃথক জায়গার। ফলে মি়ড-ডে মিলের খাওয়া সারতে হয় পড়ার বেঞ্চে বসেই। এত নেই-এর মধ্যেও মুখে অনাবিল হাসি লেগে থাকে ওই স্কুলের পড়ুয়া দেবাশিষ, বাপ্পা, মনমতীদের। অসুবিধের কথা মুখে না বললেও তাদের চোখে ফুটে ওঠে সেই যন্ত্রণা।

আখারারহাট মাথাভাঙা বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। ওই বিধানসভার বিধায়ক বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। স্কুলের দুরবস্থার বিষয়ে জানতে গেলে তিনি বলেন, “ওই স্কুলের তরফে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’’ প্রয়োজন হলে ওই স্কুলের উন্নয়ন করা হবে বলে জানান তিনি। উন্নয়নের কাজ নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ওই আবাসিক স্কুলের সমস্যাগুলির কথা জানেন বলে জানিয়েছেন কোচবিহার জেলার জেলাশাসক পি উল্গানাথান। ইতিমধ্যেই স্কুলের উন্নয়নে একটি প্রকল্প তৈরির কথাও ডানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধীদের ওই স্কুলের উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হিমানী ঈশোর জানান, তাঁরা ইতিমধ্যেই স্কুলের অনুন্নয়নের বিষয়টি নানা জায়গায় জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ কথা অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই যে ছাত্রছাত্রীরা কষ্টে আছে।’’ আবাসিক স্কুলে রাতের নিরাপত্তায় বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান শিক্ষিকা। তিনি বলেন, ‘‘রাতে নিরাপত্তারও অভাব রয়েছে। আমরা বার বার বিষয়টি ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ এই আবাসিক স্কুলের ছাত্রাবাসে নেই কোনও সুপার। নেই মেট্রনও। ওই স্কুলের আরেক শিক্ষক লুৎফর রহমান অভিযোগ করেন, রাতে একজন মাত্র পুরুষ নিরাপত্তা রক্ষী থাকেন ছাত্রাবাসে। ওই স্কুলে আরেকটি ছোট শৌচাগার থাকলেও সেটি ব্যবহারের অযোগ্য বলে জানা গিয়েছে।

২০০১ স্কুলে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং কয়েকজন মিলে ওই স্কুল তৈরি করেন। ২০০২ সালে সরকারি বোর্ডের তরফে পড়াশোনার অনুমোদন মেলে। ২০০৯ সালে সরকার ওই স্কুলকে অনুমোদন দেয়। তখন থেকেই আবাসিক ওই স্কুলের সমস্ত খরচ বহন করে সরকার। বর্তমানে দোতলার একটি ঘরে ওই স্কুল চলছে। পাশে আরেকটি ছোট ক্লাস ঘর রয়েছে। ভবনের উপরতলায় শিশুদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। চল্লিশ জন পড়ুয়ার মধ্যে পনেরো জন বালিকা রয়েছে। স্কুলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে পাঁচজন রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন