‘পড়ার চাপে চেপ্টে গিয়ে’

বই বইতে নুইছে হাড়

 রণিত তরতাজা, ঝকঝকে একটি শিশু। কিন্তু, যত উঁচু ক্লাশে উঠেছে ততই যেন নুয়ে পড়ছে। বিনীতা, রিয়ার মতো ক্লাস টেনের পড়ুয়ারাও স্কুল ব্যাগ বইতে বইতে যেন ঝুঁকে গিয়েছে। স্কুলের পরেও খানিকটা কুঁজো হয়ে হাঁটার জন্য প্রায়ই অভিভাবকদের ধমক খেতে হয় ওদের।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

বোঝা: নিজের চেয়েও ভারি বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রোজ স্কুলে যেতে যেতে ব্যথায় ভরছে শৈশব-কৈশোর। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক 

রণিত তরতাজা, ঝকঝকে একটি শিশু। কিন্তু, যত উঁচু ক্লাশে উঠেছে ততই যেন নুয়ে পড়ছে। বিনীতা, রিয়ার মতো ক্লাস টেনের পড়ুয়ারাও স্কুল ব্যাগ বইতে বইতে যেন ঝুঁকে গিয়েছে। স্কুলের পরেও খানিকটা কুঁজো হয়ে হাঁটার জন্য প্রায়ই অভিভাবকদের ধমক খেতে হয় ওদের।

Advertisement

এক ধাপ এগিয়ে সরকারি অফিসার তাঁর দুই যমজ মেয়ে কেন ঝুঁকে চলাফেরা করে তা জানতে হাড়ের বিশেষজ্ঞের চেম্বারে চলে গিয়েছিলেন। শিলিগুড়ি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত অস্থি-শল্যবিদ বিদ্যুৎ সরকার সব দেখেশুনে তাঁকে অভয় দেন। তিনি জানিয়ে দেন, লাগাতার নিজের ওজনের চেয়ে বহুগুণ ভারী ব্যাগ হাড় ও পেশিতে বাড়তি চাপ পড়ায় এমন হয়েছে। বিদ্যুৎবাবু কিছু ব্যায়াম দেখিয়ে দেন তাদের। সেই সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যাগের ওজন কিছুটা কমানোর পরামর্শও দেন তিনি। সেই পরামর্শের কথা স্কুলে জানাতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাঁকে অন্য কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর কথা চিন্তাভাবনা করতে ‘অনুরোধ’ও করেন। ফলে, যা হওয়ার তাই হয়। ভারী ব্যাগ নিয়েই তাঁর দুই মেয়েকে ক্লাস টেন অবধি ওই স্কুলেই পড়তে হয়েছে।

বস্তুত, এমন অভিজ্ঞতা এখন শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার অনেকেরই। ইস্টার্ন বাইপাসের একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ক্লাস নাইনের পড়ুয়ার ছাত্রের অভিভাবক জানান, তাঁরা একাধিকবার স্কুলে গিয়ে মিটিঙে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করলেও সুযোগ পাননি। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে শ্যামলাল চৌধুরী বলেন, ‘‘বইখাতা সহ একেকটা স্কুল ব্যাগের ওজন কমপক্ষে ১০-১২ কেজিও হয়ে যায়। এটা কাঁধে নিয়ে হাঁটাহাঁটি, যাতায়াত করলে একটা প্রতিক্রিয়া তো হবেই। স্কুলে বলে কোনও লাভ নেই। আইন চাই।’’

Advertisement

শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম গার্লস স্কুলের কয়েকজন অভিভাবকও ক্ষুব্ধ। তাঁরা জানান, স্কুলব্যাগের বোঝা কমানোর জন্য দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য উদ্যোগী হয়েছে। আইনও করেছে। তা হলে কেন শিলিগুড়ি সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে স্কুল ব্যাগের ওজন সংক্রান্ত বিধি চালু হবে না, সেটাই তাঁরা বুঝতে পারছেন না। শিলিগুড়ির অভিভাবক মঞ্চের তরফে সন্দীপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা একাধিক বার নানা স্কুলে চিঠি দিয়ে ব্যাগের ওজন কমানোর কথা বলেছি। তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্রে সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে। স্কুলব্যাগের ওজন পড়ুয়াদের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না, এমন বিধিই শিলিগুড়িতে চাইছি।’’

ঘটনা হল, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংগঠনের বিধি অনুযায়ী, ২১ বছরের কম কেউ নিজের ওজনের দশ ভাগের এক ভাগ ভার পিঠে বইতে পারেন। যদিও সাধারণ ক্ষেত্রে দেখা যায় এক একটি স্কুল ব্যাগের ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি।

উঁচু ক্লাসে ব্যাগের ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজিতে পৌঁছে যায়। শিলিগুড়ির ভক্তিনগরের একটি ইংরেজি মাধ্যমে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রের বাবার দাবি, ‘‘আমি ছেলের স্কুল ব্যাগ ওজন করে দেখেছি। পুরো সাড়ে ৮ কেজি।’’ আর্ন্তজাতিক বিধি অনুযায়ী সাড়ে ৮ কেজি ভার বইতে ছাত্রটির ওজন কমপক্ষে ৮০ কেজি হওয়া উচিত ছিল।

দার্জিলিঙের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু আমার মনে হয় এ বিষয়ে প্রথমে উদ্যোগী হতে হবে অভিভাবকদেরই। তারাই কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাগের ওজন কমানোর দাবি তুলতে পারেন।’’ জেলাশাসাক জানান, স্কুল পরিদর্শককে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন