Jalpaiguri

স্কুলের পরীক্ষায় গরহাজির, অনেক পড়ুয়াই কৃষি-শ্রমিক

জলপাইগুড়ি শহর ছেড়ে হলদিবাড়ির দিকে এগোতেই রাজ্য সড়কের দু’দিকে ধানখেত। বেশির ভাগ খেতেরই ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। ঝাড়াই-মাড়াইয়ের কাজ চলছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৩৭
Share:

লেখাপড়া বন্ধ করে ই কৃষিকাজে হাত লাগিয়েছে স্কুলছাত্রেরা। নিজস্ব চিত্র

কৃষি-শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। ধান কাটতে, ঝাড়াই করতে প্রান্তিক কৃষক পরিবারের ভরসা এখন পরিবারের পড়ুয়ারা। রাতে হিম পড়ছে। ধান বেশি দিন মাঠে ফেলে রাখা যাবে না। তাই পড়ুয়াদের হাতেও কাস্তে ধরিয়ে দিয়েছেন বাড়ির বড়রা।

Advertisement

জলপাইগুড়ি শহর ছেড়ে হলদিবাড়ির দিকে এগোতেই রাজ্য সড়কের দু’দিকে ধানখেত। বেশির ভাগ খেতেরই ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। ঝাড়াই-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। ধাপগঞ্জের মাঠে দেখা গেল, পরিবারের সঙ্গে কাজে হাত লাগিয়েছে দশম শ্রেণির এক ছাত্র। শুক্রবার দুপুর ১টা। স্কুলে মাধ্যমিক টেস্টের দু’ঘণ্টা অতিক্রান্ত। ছাত্রটির কথায়, ‘‘কয়েক দিন ধরেই মাঠে কাজ করছি। স্কুল থেকে ফোন করেছিল। বাবা বলে দিয়েছে, ধানের কাজ শেষ হলে স্কুলে যাব।’’ অভিভাবক তখন সেখানে ছিলেন না। গিয়েছিলেন আলুর জমি তৈরির সার জোগাড় করতে।

পাশের মাঠেই ছিলেন অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ার বাবা রতন মণ্ডল (নাম পরিবর্তিত)। ধান কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল পড়ুয়াটি। রতন বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা এক দিনে ৫০০ টাকা মজুরি চাইছেন। সারের দামও বেড়েছে। আমাদের পক্ষে অত মজুরি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই পরিবারের সবাই মিলে কাজ করছি। ’’ অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটি জলপাইগুড়ি শহরের যে স্কুলের, সেখানে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে তিন দিন পরেই। ছাত্রটি বলে, ‘‘ভূগোল খুব ভাল লাগে। তবে এখন মাঠে কাজ রয়েছে। পড়ার সময় কম।’’

Advertisement

ধাপগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে তোড়লপাড়া নেতাজি বিদ্যাপীঠ। সেখানে এ দিন থেকেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট এবং বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। অনুপস্থিত পড়ুয়ার সংখ্যা ৪০। অনুপস্থিতদের মধ্যে জনা-তিরিশ ছাত্র। প্রধান শিক্ষক শেখর দাস বলেন, ‘‘অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে ছাত্রদের অনুপাত বেশি। মাঠ থেকে ডেকে এনে পরীক্ষায় বসাচ্ছি। তার পরেও যারা অনুপস্থিত, বাড়ি গিয়ে কথা বলা হবে।’’ বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, ‘‘অনুপস্থিত পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরানোর দায়িত্ব স্কুল ও প্রশাসনকে নিতে হবে।’’ তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক অঞ্জন দাস বলেন, ‘‘অনেক ছেলেমেয়েই টেস্ট দিচ্ছে না। করোনার সময় থেকেই এই প্রবণতা বেড়েছে। ৃ ব্লক এবং অঞ্চলের প্রতিনিধিদের দিয়ে স্কুলছুটদের বাড়িতে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’’

এ সবের মধ্যেই ছবিটা প্রতিদিনই এক— মাঠের পরে মাঠ জুড়ে পড়ুয়াদের ভিড়। কোথাও অষ্টম, কোথাও দশম, কোথাও দ্বাদশ শ্রেণি ঘর্মাক্ত মাঠের কাজে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন