ইচ্ছেয় ভর করেই আলোর পথে দৌড়

সোমবার কোচবিহার শহর লাগোয়া বাবুরহাট শ্রীরামকৃষ্ণ বয়েজ হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে বেরনোর পরে তিনজনের চেহারাতেই তৃপ্তির ছাপ। প্রত্যেকের গলাতেই ধরা পড়ে আত্মবিশ্বাসের সুরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৫
Share:

পরীক্ষা দিয়ে বেরোচ্ছে তিন ছাত্র। নিজস্ব চিত্র

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিলই। সেই নিয়ে লড়াইয়ের পথে আরও বাধা এনে দিয়েছিল পরিবারের আর্থিক অনটন। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি ছিল বাঁধভাঙা। তাতে ভর করেই স্বপ্ন ছুঁতে চেয়েছিল কোচবিহারের তিন দৃষ্টিহীন ছাত্র। সেই পথে হেঁটেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসল তারা। তিন জনই কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের ছাত্র।

Advertisement

সোমবার কোচবিহার শহর লাগোয়া বাবুরহাট শ্রীরামকৃষ্ণ বয়েজ হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে বেরনোর পরে তিনজনের চেহারাতেই তৃপ্তির ছাপ। প্রত্যেকের গলাতেই ধরা পড়ে আত্মবিশ্বাসের সুরও।

ওই তিন ছাত্রের নাম বিজয় নায়েক, দেবব্রত সরকার ও জুলিয়াস মারান্ডি। ডুয়ার্সের পাটকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিজয়ের বাবা নেই। মা চা বাগান শ্রমিক। দেবব্রত তুফানগঞ্জের অন্দরানফুলবাড়ির বাসিন্দা। জুলিয়াসের বাড়ি অসমের শ্রীরামপুরে। ওই দুই পরিবারই কৃষিজীবী। তিনজনই ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবি। কোচবিহারের দৃষ্টিহীন বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে কোচবিহার টাউন হাইস্কুলে ভর্তি হয় তারা। টাউন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিভূতি দে বলেন, “অদের পড়াশোনায় দারুণ উৎসাহ। মাধ্যমিকের টেস্টেও ওরা ভাল ফল করেছে।’’ তাঁর আশা তিনজনই অন্তত প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবে।

Advertisement

দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা নিয়ে আগেভাগেই বাড়তি তৎপরতা ছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের। ওই বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের স্কুলে নির্দেশ পাঠান হয়। সেইমত একটি আলাদা ঘরে ওই তিনজনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছিল পাখা ও পানীয় জলের ব্যবস্থাও। নিয়ম মেনে বরাদ্দ সময়ও তাদের দেওয়া হয়েছে।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কোচবিহারের প্রতিনিধি মিঠুন বৈশ্য বলেন, “ওদের পড়াশোনার আগ্রহ সত্যি প্রশংসনীয়। পরীক্ষা দিতে কারও যাতে এতটুকু সমস্যা না হয় তা নিয়ে বাড়তি নজর রাখা হয়েছে।’’ বাকি পরীক্ষার দিনগুলোতেও একইরকম ভাবে নজর থাকবে বলে জানান তিনি।

এ দিন পরীক্ষা দিয়ে খুশি বিজয়, দেবব্রত ও জুলিয়াস। দেবব্রত বলে, “ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই। আরও ভাল করে পড়াশোনো করব।’’ অন্যদিকে বিজয়, জুলিয়াসদের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশার পাশে রয়েছে পরিবারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন