বিয়ে রুখে কৃতীর পাশে ছাত্র সংগঠন

সাহাজাদপুর পঞ্চায়েতের পীরপাড়ায় ভাঙাচোরা টালির বাড়িতে থাকেন মীরা। বাবা শ্রীমন্ত গাজলেরই বিভিন্ন দোকানে জল দেন। আর মা সুমিত্রা বাড়িতে বিড়ি বাঁধেন।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

গাজল (মালদহ) শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০২:৫৬
Share:

স্বপ্ন: পড়াবেন। মীরার স্বপ্ন সফল হওয়ার পথে। নিজস্ব চিত্র

বাবা দোকানে দোকানে জল দেন। অভাবের সংসারে হাল ফেরাতে বিড়ি বাঁধেন মা। অভাব-অনটনের সংসারে পড়াশোনা ছিল বিলাসিতা মাত্র। তাই পড়া থামিয়ে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছিল পরিবার। এমনকি, পাকা দেখাও হয়ে গিয়েছিল। তারপরেও দমে যাননি মেয়ে। নিজের বিয়ে নিজে রুখে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৩১ নম্বর পেয়ে সফল হয়েছেন মালদহের গাজলের প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্রী মীরা সিংহ। তবে উচ্চ শিক্ষায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অর্থ। অবশেষে অভাবী-মেধাবি সেই ছাত্রীর পাশে দাঁড়াল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। বৃহস্পতিবার ছাত্র সংগঠনের টাকায় গাজল কলেজে ইংরেজি অর্নাস নিয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হলেন মীরা। স্নাতক পর্যন্ত তাঁর পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহন করারও আশ্বাস দিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। আর তাতেই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন মীরা।

Advertisement

সাহাজাদপুর পঞ্চায়েতের পীরপাড়ায় ভাঙাচোরা টালির বাড়িতে থাকেন মীরা। বাবা শ্রীমন্ত গাজলেরই বিভিন্ন দোকানে জল দেন। আর মা সুমিত্রা বাড়িতে বিড়ি বাঁধেন। মীরাও মায়ের সঙ্গে বিড়ি বাঁধে। তাঁরা তিন বোন। দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অভাবের সংসারে তাঁরও বিয়ে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছিল পরিবার।

তিনি গাজোলের তরিকুল্লাহ সরকার হাইস্কুলে পড়াশোনা করতেন। একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠতেই তাঁকে দেখতে আসেন পাত্রপক্ষ। আর এক দেখাতেই মীরাকে পছন্দ করেছিলেন তাঁরা। তবে বিয়েতে আপত্তি ছিল মীরার। স্কুলে গিয়ে পুরো ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের সাহায্যে নিজের বিয়ে রুখে দেন ওই ছাত্রী। তিনি বাংলায় ৮৮, ইংরেজিতে ৯০, শিক্ষা বিজ্ঞানে ৮৮, ভুগোলে ৮২ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮৩ নম্বর পেয়েছেন।

Advertisement

মীরার ইচ্ছে ইংরেজি অর্নাস পড়ে শিক্ষিকা হওয়ার। টাকার কারণে একাধিক কলেজে আবেদন করতে পারেননি তিনি। তিনি গাজল কলেজে ইংরেজি বিষয়ে আবেদন করেছিলেন। মেধা তালিকায় ২৩ নম্বরে নাম ছিল তাঁর। তবে তাঁর সেই স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অভাব-অনটন। কারণ স্নাতকে অর্নাস নিয়ে ভর্তির জন্য ২ হাজার ২২৩ টাকা লাগবে। সেই টাকা জোগাড় হচ্ছিল না। মীরা দ্বারস্থ হন স্কুলের। তারপরেই তাঁর কথা ছড়িয়ে পড়ে গাজল জুড়ে। মেধাবী এই ছাত্রীর পাশে দাঁড়ায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রসূন রায় গাজোলেরই বাসিন্দা। তিনি তাঁর সংগঠনের পক্ষ থেকে মীরাকে সাহায্য করেন। এমনকি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে কলেজে ভর্তির খরচ, গৃহশিক্ষক নিতেও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন