পোড়ামাটিতেই ধরা পড়ছে সারা সংসার

কোথাও একা এক মহিলা। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। কোথাও একটি গাছ। ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাকী। কিংবা কোনও হরিণ হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সবই স্থবির। ধরা পড়ছে পোড়ামাটিতে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করণদিঘি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫২
Share:

জাদু: মাটিতে জীবন। নিজস্ব চিত্র

কোথাও একা এক মহিলা। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। কোথাও একটি গাছ। ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাকী। কিংবা কোনও হরিণ হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সবই স্থবির। ধরা পড়ছে পোড়ামাটিতে।

Advertisement

ইতিহাসবিদরা বলেন, টেরাকোটা বা পোড়ামাটির শিল্পদ্রব্য আদিম সভ্যতার শিল্প প্রচেষ্টার অন্যতম প্রতীক। মৃৎশিল্পের বিশ্বজনীন আবেদনকে হস্তশিল্পের কাব্য মনে করা হয়। প্রযুক্তির উন্নতিতে যুগের পালাবদল ঘটে চলেছে। তাতে হারিয়ে যেতে বসেছে পুরনো এই ধরনের শিল্প। সেই সংস্কৃতিকে ধরে রাখার লক্ষে আয়োজন করা হয়েছে টেরাকোটা কর্মশালার। বুধবার উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘির দোহমনা শুরু হয়েছে চার দিনের সেই কর্মশালা। শিবির চলবে শনিবার পর্যন্ত। শিবিরের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ভাস্কর তারক গড়াই।

অনুষ্ঠানের কোঅর্ডিনেটর শিবশঙ্কর উপাধ্যায় বলেন, ‘‘উত্তর দিনাজপুর জেলায় এই প্রথম এই ধরনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিকিম, কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০০ জন শিক্ষার্থী এই কর্মশালায় যোগ দিচ্ছেন।’’ শিবিরে হাতে কলমে পাঠ দিচ্ছেন তারকবাবু। আয়োজকরা জানান, মৃৎশিল্পীদের কথা চিন্তা করে এই কর্মশালার আয়োজন। তারকবাবু বলেন, ‘‘আর্ট স্কুলের অভাবে প্রকৃত ভাবে শেখা হয় না শিল্পীদের। বহু প্রতিভা জেলায় রয়েছেন। তাঁদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।’’ উৎসাহীদের দেখে তিনি আপ্লুত। শিবিরে তিনি উত্তরবঙ্গে একটি আর্ট কলেজের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘‘কর্মশালার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি শিল্পীদের প্রাচীন ও আধুনিক কৌশল শেখানো। আমরা এই এই আদিম, মধ্যযুগে ব্যবহৃত ভাস্কর্যশিল্পে একটি সমসাময়িক ও আধুনিক স্পর্শ যোগ করার চেষ্টা করেছি।’’

Advertisement

কর্মশালায় যোগ দিতে এসে রাকিবা খাতুন, সুজিত দাস, রাখি সিংহ এবং পিংকি সিংহরা জানান, আশেপাশে তাঁরা যা দেখেন, তাই মাটিতে রূপ নিচ্ছে তাঁদের চোখের সামনে। প্রথম বারের মতো টেরাকোটা কর্মশালায় যোগ দিতে পেরে তাঁরা জানতে পারলেন, কেমন হয় নারীর গড়ন। গ্রামবাংলার নানা উপাদান। মেঝেতে বসে আছে এক রমণী। তার পাশেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বিড়ালছানা। কি করে তা গড়তে হবে, তা শেখানো হল হাতে কলমে। ভবিষ্যতে এই ধরনের শিবিরের দাবি করেন তাঁরা।

আয়োজকরা জানান, প্রাচীন কাল থেকে মাটির শিল্পের চর্চা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে মাটির শিল্পের তেমন কাজ হচ্ছে না। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ভাস্কর্য। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্য এবং শিল্পীদের উৎসাহ দিতে এই কর্মশালার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন