যাত্রায় মমতার দিল্লি চলো’র প্রচার

কলকাতার ‘লোকবন্দনা অপেরা’র যাত্রাপালা,  নাম ‘মমতার ডাকে দিল্লি চলো’। যাত্রার মাধ্যমেই লোকসভা ভোটের দিকে নজর রেখে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নেমেছে ওই যাত্রাদল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৪
Share:

পালা: লোকসভা ভোটের বছরে এই যাত্রাপালা উত্তরবঙ্গ-সহ বাংলার গ্রামেগঞ্জে তৃণমূলের হয়ে প্রাথমিক প্রচার সারছে। নিজস্ব চিত্র

‘মমতার ডাকে দিল্লি চলো’। এর পরই বন্দেমাতর‍ম ধ্বনি উঠতে শুরু করল। তারপর কয়েকজন লোক হাতে ঘাসফুলের পতাকা নিয়ে ভোট চাইতে বের হল। মাঠের ভিতরে তখন হাজার হাজার মানুষ। আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উঠে আসেন মঞ্চে। তাতেই হাততালির ঝ়ড় উটল মাঠ জুড়ে।

Advertisement

না, এটা তৃণমূলের কোনও সভার বর্ণনা নয়। এখানে আসল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নেই। কলকাতার ‘লোকবন্দনা অপেরা’র যাত্রাপালা, নাম ‘মমতার ডাকে দিল্লি চলো’। যাত্রার মাধ্যমেই লোকসভা ভোটের দিকে নজর রেখে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নেমেছে ওই যাত্রাদল। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, যাত্রায় বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, অরূপ বিশ্বাস থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। চেনা নেতার বেশে অজানা, অনামী অভিনেতারাই নজর কাড়ছেন যাত্রার আসরে। যাত্রাদলের পরিচালক উত্তম মাইতি বলেন, “আমি তৃণমূলের সমর্থক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে চলি। আগামী লোকসভায় যাতে ৪২টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়, সেই চেষ্টাতেই নেমেছি আমরা আমাদের মতো করে।”

বৃহস্পতিবার কোচবিহারের পেটলায় এবং শুক্রবার শীতলখুচিতে ওই যাত্রা মঞ্চস্থ হয়েছে। যা দেখতে দু’দিনই দর্শকের ঢল নামে বলে উদ্যোক্তারা জানান। যাত্রা দলের তরফে জানানো হয়েছে, ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা একাধিক মঞ্চে ওই যাত্রা চলবে। এর মধ্যে ৬ জানুয়ারি কোচবিহার রাসমেলার মাঠের মঞ্চেও ওই যাত্রা পরিবেশিত হবে। তার দু’দিন পরেই ওই মাঠেই সভা করতে আসছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে যাত্রাপালার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই। টালিগঞ্জের নামী শিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে শীতের সময়ে কোচবিহার-সহ উত্তরবঙ্গের নানা জেলায় যাত্রা করতে আসেন। এ বছর লোকসভা ভোট রয়েছে। সেই ভাবনাকে মাথায় রেখেই এমন যাত্রা তৈরি করা হয়েছে বলে যাত্রাদলের তরফে জানানো হয়েছে। তৃণমূলের নানা অনুষ্ঠানে ওই যাত্রাদলকেই ডাকা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ওই যাত্রা দেখতে পেটলায় গিয়েছিলেন কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। তিনি বলেন, “আমার খুব ভাল লেগেছে। প্রতিটি দৃশ্যই সুন্দর।”

কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে দলও চিন্তায় আছে। যুব ও মূল তৃণমূলের দ্বন্দ্বে প্রায় সব জায়গাতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তৃণমূলের সভা, মেলা, উৎসব সবেতেই এখন সেই দ্বন্দ্বের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোনও মিটিং হলে এক পক্ষ গরহাজির থাকছেন। কেউ হয়তো অন্য পক্ষের কাউকে আমন্ত্রণও জানাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। এই অবস্থায়, যাত্রার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে দলের হয়ে লোকসভার প্রাথমিক প্রচার সেরে রাখতে চাইছে দুইপক্ষ, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। দিনহাটা, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ থেকে কোচবিহার সদর, তাই সবপক্ষই মিলেমিশে বরাত দিয়েছেন ওই যাত্রাদলকে।

কী রয়েছে ওই যাত্রায়? পরিচালক জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন। তাঁর আন্দোলন। আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁর জখম হওয়া থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া। সেই সঙ্গে তৃণমূলের আমলে বাংলার উন্নয়ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় রয়েছেন সীতা ঘোষ। যাত্রায় বিজেপির বিরোধিতাও রয়েছে। কখনও মঞ্চে, কখনও বাসে বড় বড় হরফে লিখে তাই দেওয়া হয়েছে, “রথযাত্রা নয়, বাংলার উন্নয়নের যাত্রাপালা।”

তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “ভাওয়াইয়া, পথ নাটক করে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা হয়। যাত্রার মাধ্যমেও একসঙ্গে অনেক মানুষের কাছে একবারে যাওয়া সম্ভব। সেখানে শুধু তৃণমূল নয়, বিরোধী দল করেন, এমন মানুষও যাত্রা দেখেন। তাতে মন জয়ের একটা সুযোগ থাকে।”

বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “তৃণমূল দলই তো একটি যাত্রাপালা। আলাদা করে আর কী করার আছে। মানুষ এসব দেখে হাসে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন