বাহিনীর গাড়িতে ফোন নম্বর নেই, ক্ষোভ

সকাল থেকে শিলিগুড়ি থানা সামনে একের পর এক ছোট গাড়ির ভিড়। রাস্তা জুড়ে যানজট। কোনটায় লেখা এমসিসি, কোনওটায় পুলিশ, কোনটায়’বা সেকটর। কুইক রেসপন্স টিম বা ফ্লাইং স্কোয়াডের গাড়িরও ছড়াছড়ি।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

ফুলবাড়ির কাছে কামরাঙাগুড়ির একটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। — বিশ্বরূপ বসাক

সকাল থেকে শিলিগুড়ি থানা সামনে একের পর এক ছোট গাড়ির ভিড়। রাস্তা জুড়ে যানজট। কোনটায় লেখা এমসিসি, কোনওটায় পুলিশ, কোনটায়’বা সেকটর। কুইক রেসপন্স টিম বা ফ্লাইং স্কোয়াডের গাড়িরও ছড়াছড়ি। কয়েকটা গাড়ি দেখার পর সামনে পিছনে রঙীন পোস্টার এবং ফ্লেক্স বাধা। তাতে কঠিন চোয়ালের জলপাই রঙের পোশাক পড়া জওয়ানদের ছবি। বড় বড় হরফে লেখা জাতীয় নিবার্চন কমিশন, সেন্ট্রাল প্যারামিলিটারি ফোর্স বা সিপিএফ। অনেকটাই সিনেমার পোস্টারের মত। প্রতি গাড়িতেই প্রায় বসে রয়েছেন, রাজ্য পুলিশের এক অফিসার আর ৪ থেকে ৫ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। গাড়ি থানা থেকে বার হয়ে নির্দিষ্ট বুথের আশেপাশে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ফের এসে থানার সামনেই দাঁড়িয়ে পড়ছে। বিকাল অবধি শিলিগুড়ি, প্রধাননগর, মাটিগাড়া বা ভক্তিনগর থানার সামনে এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। শিলিগুড়ির বিভিন্ন থানা এলাকায় রয়েছে ৩২ কোম্পানি আধা সামারিক বাহিনী।

Advertisement

এমনই গাড়ি থাকা জওএয়ানদের কয়েকজন জানান, রাজ্য পুলিশের থেকে আলাদা করে চেনাতে গাড়িতে ফ্লেক্স আর রঙিন পোস্টার সাঁটা হয়েছে। তা আরও জোরদার করতে শুধু লেখা নয়, ছবিও দেওয়া হয়েছে জওয়ানদের।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, অবাধ, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে কমিশন কতটা কার্যকরী তা আগের দুই দফায় অনেক জায়গাতেই বোঝা গিয়েছে। আজ, রবিবার উত্তরবঙ্গের পালা। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা পর্যবেক্ষকদের টেলিফোন ফ্লেক্স বা পোস্টারে দিতে হতো। সব জায়গায় পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করছে তা পরিস্কার। ভোটের দিন কী হবে তাই দেখার। কারণ, কোনও পাড়ায় বা এলাকায় গোলমাল হলে তো ফোন নম্বর থাকলে তো বাহিনীকে ডাকা যেত। তা হয়নি। বিরোদী শিবিরের প্রশ্ন, ‘‘এক এলাকায় গোলমালের সময় বাহিনী পুলিশের সঙ্গে অন্য এলাকায় থাকবে না, তার কী গ্যারান্টি আছে?’’

Advertisement

সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেছেন, ‘‘শিলিগুড়ি শহরে সাধারণত গোলমাল হয় না। তৃণমূল গোলমাল করতে গেলে মানুষ জবাব দিয়ে দেবে। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় গোলমালের আশঙ্কা থাকেই। পঞ্চায়েত ভোটে তা হয়েছে। ইতিমধ্যে ফাঁসিদেওয়ার চটহাট রক্তাক্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে পুলিশের হেফাজতেই। ভোটের সারাদিন বাহিনী কী করে তাই দেখার।’’ আর জেলা বিজেপির সাদারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায় চৌধুরী বলেছেন, ‘‘বাহিনী আছে। তা কতটা কার্যকরী ভাবে থাকবে তা আমরাও দেখব।’’

একই আশঙ্কার কথা জানিয়ে জেলা কংগ্রেস নেতা সুবীন ভৌমিক, কুন্তল গোস্বামীরা। তাঁরা জানান, বাহিনী তো সব জাগায় রয়েছে। কিন্তু এলাকার নিয়ন্ত্রণ কতটা তাঁরা নিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। সব জায়গায় তো রাজ্য পুলিশই। গ্রামে গ্রামে বাহিনী কী করে তাই দিনভর দেখতে হবে।

এরই মধ্যে ভোটের ২৪ ঘন্টা আগে থেকে থানা এলাকাগুলির অলিগলিতে শুরু হয়েছে ‘বাইক মোবাইল’ নামের এক নতুন বাহিনীর বিচরণ। যদিও তা রাজ্য পুলিশের বাহিনীই। কমিশনারেট এলাকায় ১০টি এমন বাহিনী রয়েছে। প্রত্যেক বাইকে অফিসার এবং কনস্টেবলেরা থাকছেন। গাড়ি ঢুকতে পারে না এমন এলাকায় জমায়েত, ভিড় বা বস্তিতে রাতে প্রচার বা জিনিস বিলি আটকাতে এই বাহিনী নজরদারি করবে বলে পুলিশের দাবি। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া অবধি পুলিশের বাইক বাহিনী শহরে মোতায়েন থাকবে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘বাহিনী বাহিনীর মত কাজ করছে। আমাদের বিভিন্ন ধরণের দল এলাকায় এলাকায় রয়েছে। তারমধ্যে বাইক বাহিনী অন্যতম। শনিবার রাত অবধি কোনওপক্ষই কোনও অভিযোগ করেনি। শান্তিপূর্ণ ভোট হবে বলে আমরা আশা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন