ফুল বেচেই উঠছে পড়াশোনার খরচ

সারা বছর ধরে বৈশাখের অপেক্ষায় থাকে ওরা। কারণ ফি বৈশাখের শনি ও মঙ্গলবার ভক্তদের ঢল নামে মালদহের ঐতিহ্যবাহী জহুরা কালী মন্দিরে।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ১২:৩৯
Share:

পসরা: মালদহের জহুরা কালী মন্দিরে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়

সারা বছর ধরে বৈশাখের অপেক্ষায় থাকে ওরা। কারণ ফি বৈশাখের শনি ও মঙ্গলবার ভক্তদের ঢল নামে মালদহের ঐতিহ্যবাহী জহুরা কালী মন্দিরে। আর ফুল, বেলপাতা, ধূপকাঠি, সিঁদুরের পসরা নিয়ে হাজির হয়ে যায় তিস্তা, রানা, দীপরা। দিনের শেষে পুজোর উপকরণ বেচে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ঘরে নিয়ে যায় তারা। তা জমিয়েই সারা বছরের খাতা, কলম কিনে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে এই খুদে ব্যবসায়ীরা। কর গুনে তারা বলে দিচ্ছে এই মাসে চারটি মঙ্গলবার ও পাঁচটি শনিবার পড়েছে।

Advertisement

ওদের কারও বাবা রিকশা চালায়। কারও বাবা দিনমজুর। তাই নিজেদের পড়ার খরচ নিজেরাই জোগাড় করতে তৎপর খুদের দল।

শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে ইংরেজবাজার ব্লকের রায় গ্রামে ঐতিহ্যবাহী জহুরা কালী মন্দির। কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে উত্তরপ্রদেশের এক সাধক ছল্ল তিওয়ারি স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবী জহুরার আরাধনা শুরু করেন। সেই থেকেই মহা সমারোহে এখানে পুজো হয়ে আসছে। পুজো কমিটির দাবি, বৈশাখ মাস জুড়ে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মুকুল তিওয়ারি বলেন, ‘‘শুধু বাংলা নয়, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকেও অগণিত ভক্ত পুজো দেওয়ার জন্য ভিড় জমান।’’

Advertisement

তাই বৈশাখ এলেই চোখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে ওই গ্রামের প্রায় শতাধিক স্কুল পড়ুয়ার। অধিকাংশ পড়ুয়া স্থানীয় জহুরতলা ও বাদলমনি হাইস্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তাদের মধ্যে কেউ মন্দির চত্বরেই জবা, পদ্ম, বেলপাতা, ধূপকাঠি, সিঁদুর, আলতার পসরা সাজিয়ে বসে পড়ে। অনেকে আবার ডালিতে পুজোর উপকরণ সাজিয়ে হাজির হয়ে যায় ভক্তদের কাছে। পাঁচ টাকায় দু’টি জবা, বেলপাতা ও দু’টো ধূপকাঠি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তিস্তা দাস, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র দীপ সরকার ও রাণা হালদাররা। তিস্তার কথায়,‘‘ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ফুলের ডালি নিয়ে ঘুরলে কমপক্ষে ২৫০ টাকা লাভ হয়। তাই খেলাধুলো ও টিউশনে না গিয়ে ফুল বিক্রি করি।’’ দীপ জানাচ্ছে, তার বাবা কষ্ট করে সংসার চালান। বারবার করে খাতা,কলম কিনে দিতে পারেন না। লাভের টাকা লক্ষ্মীর ভাঁড়ে জমিয়ে রেখে বছরভরের পড়াশোনার খরচ জুটে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement