বৃদ্ধাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি উদ্যোগে ওঁরা সকলেই তৃতীয় লিঙ্গের মর্যাদা পেলেও জোটেনি কোনও সরকারি সুবিধা।
সরকারি উদ্যোগে ওঁদের কর্ম সংস্থানেরও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। কটূক্তি উপেক্ষা করে হাটে-বাজারে-উত্সবে নেচে গেয়ে ওদের দিন কাটে। বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক সাহায্য নিয়ে এক ছাদের নিচে কোনও ভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকেন ওঁরা। এ রকমই ৩২ জন বৃহন্নলা দুর্গাপুজোর মুখে এলাকার দুঃস্থ বাসিন্দাদের একাংশের পাশে দাঁড়িয়ে নজির সৃষ্টি করলেন।
সোমবার সকালে রায়গঞ্জের অশোকপল্লি এলাকায় ৪০০ জন দুঃস্থ পুরুষ ও মহিলার মধ্যে শাড়ি, ধুতি ও মিষ্টি বিলি করলেন তাঁরা। অশোকপল্লি এলাকাতে গত কয়েকবছর ধরে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন ৩২ জন বৃহন্নলা। এদিন তাঁদের পোশাক বিলির ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর আদেশ মাহাতো।
বৃহন্নলাদের ওই উদ্যোগ দেখে নিজের আবেগ চেপে রাখতে পারেননি তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে আদেশবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যাঁরা নিজেরাই দুঃস্থ, সামাজিক তাচ্ছিল্য ও বঞ্চনার শিকার, সমাজে পিছিয়ে থাকা সেইসমস্ত বৃহন্নলারা উত্সবের মরশুমে নিজেদের সাধ্যমতো যেভাবে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ালেন, তা দেখে আমাদের সকলেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত।’’
বৃহন্নলাদের তরফে সোনাদেবী বলেন, ‘‘আমরা সারাবছর শহরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের সাহায্য ও অনুদান নিয়ে বেঁচে থাকি। তাই দুঃস্থদের অভাব ও যন্ত্রণার কথা বুঝতে পারি। তাই দুর্গাপুজোর মুখে শহরের দুঃস্থ বাসিন্দাদের একাংশের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা তাঁদের হাতে সাধ্যমতো শাড়ি, ধুতি ও মিষ্টি তুলে দিলাম।’’ শাড়ি ও ধুতি পেয়ে খুশি রায়গঞ্জের বামনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা পেশায় পরিচারিকা শান্তি বর্মন, রায়পুর এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর দুলাল মণ্ডল-সহ অনেকেই!
তাঁদের কথায়, ‘‘দুঃস্থরাই দুঃস্থদের যন্ত্রণার কথা বুঝতে পারেন। পেটের তাগিদে সেজেগুজে ঘুরে বেড়িয়ে ভাল থাকার অভিনয় করতে হয়, তা ওঁদের সঙ্গে কথা না বললে আমরা কখনোই জানতে পারতাম না।’’