সাপুড়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সাপ বাঁচান পথিক

পেশায় ফার্মাসিস্ট। সাপ উদ্ধারের নেশায় শহর থেকে গ্রাম ঘুরে বেড়ান কোচবিহার শহর সংলগ্ন ১ নম্বর কালিঘাট রোডের বাসিন্দা পথিক সাহা

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

সাপ উদ্ধারই তাঁর নেশা। খবর পেলেই বাইকে ছোটেন। উদ্ধারকাজ শেষ হলে সংক্ষিপ্ত দু’মিনিটের বক্তব্য থাকে তাঁর। আবার কোথাও সাপের খেলা দেখানো হচ্ছে, শুনেই হাজির সেখানে। সাপুড়েদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েও সাপ উদ্ধার করা চাই তাঁর।

Advertisement

পেশায় ফার্মাসিস্ট। সাপ উদ্ধারের নেশায় শহর থেকে গ্রাম ঘুরে বেড়ান কোচবিহার শহর সংলগ্ন ১ নম্বর কালিঘাট রোডের বাসিন্দা পথিক সাহা। গত দু’মাসে ২০টির বেশি সাপ উদ্ধার করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজের বাড়িতে এনে কালকেউটে, দুধরাজ সাপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে ওই এলাকাতেই ছেড়ে দেন।

তিনি বলেন, “সাপের সংখ্যা ক্রমশই কমছে। পরিবেশের পক্ষে তা ঠিক নয়। এটাই সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করছি। তাতে কাজ হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এখন অনেকেই সাপের ক্ষতি না করে তাঁদের মতো উদ্ধারকারীদের ডেকে পাঠাচ্ছেন। বন দফতর জানিয়েছে, এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। তবে সাপের যত্ন নেওয়ার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। সেই নিয়ম এমন উদ্ধারকারীদের শিখে নেওয়া উচিত।

Advertisement

পথিকবাবু জানান, কোনও সাপ উদ্ধার করার পরে নিয়ম মেনেই উদ্ধারস্থানের দু’শো মিটারের মধ্যে তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘুঘুমারির বাসিন্দা মনোজিৎ দত্ত বলেন, “বাড়ির একটি ঘরে গোখরো ঢুকে পড়ে। বাড়ির সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কী করব বুঝে উঠতে না পেরে পথিকের খোঁজ পাই। তিনি এসে ওই সাপ উদ্ধার করে আবার আমাদের এলাকাতেই ছেড়ে দেন।” দেওয়ানহাটের এক বাসিন্দার বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় কালকেউটে সাপের ডিম। ওই এলাকা থেকে তিনটি কালকেউটে সাপও উদ্ধার হয়। তিনি দাবি করেন, কোচবিহার তো বটেই আশেপাশের কোনও জেলাতেই এখন আর কালকেউটে দেখা যায় না। পুণ্ডিবাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, “ঘরের ভিতরে সাপ ঢুকে যাওয়ায় প্রথমে সমস্যা পড়েছিলাম। তবে না মেরে পথিকবাবুকেই ডেকে পাঠাই।”

পথিক জানান, ছোটবেলায় সাপ নিয়ে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের কাছে অনেক কুসংস্কারের কথা শুনেছেন। বড় হওয়ার পরে বুঝতে পারেন ছোটবেলার জানা কথাগুলি ভুল ছিল। তারপরেই সাপের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে তাঁর। সেই সময় থেকে বইপত্র এবং নানা পরিবেশপ্রেমী মানুষের কাছে যেতে যেতেই সাপ ধরতে শেখা পথিকের। পড়াশোনার জন্য চাকদহে ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই সাপ উদ্ধার করতে শুরু করেন। বলেন, “দেখতে দেখতে ১৬ বছর হয়ে গেল, সাপ উদ্ধারের কাজ করছি। তবে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে সাপ সম্পর্কে ধারণা বদলাচ্ছেন। এটা বড় পাওনা।” তিনি জানান, বলরামপুরের তপনকুমার দেব সহ আরও কয়েকজন সাপ উদ্ধার নিয়ে ভাল কাজ করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন