Bharat Jodo Nyay Yatra

শহর জুড়ে উদ্দীপনা আর কড়া নিরাপত্তায় রাহুল-যাত্রা 

রাস্তার দু’ধারে কেউ গোলাপ, রজনীগন্ধা তুলে দেখিয়েছেন রাহুলকে, কেউ বা ছুড়ে দিয়েছেন ফুল, চকলেট।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২১
Share:

কংগ্রেসের ন্যায় যাত্রায় রাহুল গান্ধী। রবিবার শহর শিলিগুড়ির পথে। ছবি: স্বরূপ সরকার।

কথা ছিল দেড় কিলোমিটার পথ ‘পদযাত্রা’ করবেন। রবিবার বিকেলে জলপাইগুড়িতে জনস্রোতই যেন রাহুল গান্ধীকে ঠেলে আরও এক কিলোমিটার এগিয়ে নিয়ে গেল। জলপাইগুড়ির পূর্ত দফতরের মোড় থেকে কদমতলা পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে কাতারে কাতারে মানুষ।

Advertisement

সেই মানুষের ঢলের টানেই সূচি না থাকলেও কদমতলা থেকে আরও এগিয়ে শিল্প সমিতিপাড়া পর্যন্ত গাড়ির উপরে বসে হাত নাড়তে নাড়তে এগিয়ে গেলেন রাহুল। রাস্তার দু’পাশে ভিড়ের মধ্যে কে ছিল না! শিশু থেকে বৃদ্ধ, তৃণমূল থেকে বিজেপি সমর্থক সকলেই রাহুলকে এক ঝলক দেখতে হাজির।

মার্চেন্ট রোডের একপাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের এক দাপুটে পুর প্রতিনিধি, যিনি যুব নেতা হিসেবেই বেশি পরিচিত। রাহুলকে দেখে তিনি হাত নাড়েন। তিনিও এক সময়ে কংগ্রেসে ছিলেন। কিছুটা এগিয়ে রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’ যখন জেলা বিজেপির পার্টি অফিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, সে সময়ে বিজেপির জেলা কমিটির একাধিক নেতাকে মোবাইল বের করে ছবি তুলতেও দেখা যায়।

Advertisement

রাস্তার দু’ধারে কেউ গোলাপ, রজনীগন্ধা তুলে দেখিয়েছেন রাহুলকে, কেউ বা ছুড়ে দিয়েছেন ফুল, চকলেট। রাহুল গাড়ির মাথায় চড়ে হাত নাড়ছিলেন, সামনে হাঁটছিলেন এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। ভিড় দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, “স্বতঃস্ফূর্ত এ উন্মাদনা!”

‘ন্যায় যাত্রা’ শেষ হওয়ার পরেও জলপাইগুড়ি শহরের শিরীষতলা, অসম মোড় এবং ফাটাপুকুরে রাস্তার দু’দিকে শুধু কালো মাথার ভিড়। সকলেরই অপেক্ষা রাহুলকে একবার দেখার। কেউ রাস্তায় দু’ঘণ্টা, কেউ বাড়ির কাজ ফেলেই ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তার পাশে। জলপাইগুড়ির থানা মোড়ে যখন রাহুল এসে পৌঁছেছেন, তাঁকে দেখেই এক দল যুবতী উচ্ছ্বসিত হয়ে চিৎকার করেছেন।

মার্চেন্ট রোডে গাঁদাফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। কদমতলায় মাঝবয়সী মহিলারা রাহুলকে দেখে ফুল ছেটাতে শুরু করেন। রাহুলও ভিড়ের সঙ্গে সৌজন্য আদানপ্রদান করে গিয়েছেন নাগাড়ে। হাত নেড়ে ডেকেছেন, কখনও ইশারায় বুঝিয়েছেন, “ভাল থাকবেন।”

মার্চেন্ট রোড, উকিল পাড়া-সহ কয়েকটি মোড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো খুদেদের ডেকে গাড়ি থামিয়ে সঙ্গে তুলে নিয়ে পাশে বসিয়েছেন। এক কিশোরী তো রাহুলের পাশে বসে আবেগে কেঁদেও ফেলে।

সামনে ঢাক, তার পরে তাসা-ব্যান্ডে রবিবাসরীয় জলপাইগুড়ি যেন ছিল উৎসবের মেজাজে। জলপাইগুড়ি পুরসভায় মাত্র দুটি ওয়ার্ডে জিতেছে কংগ্রেস। গত বিধানসভা-লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়িতে ভোটের অঙ্কে ঢের পিছিয়ে কংগ্রেস।

তার পরেও এমন ভিড়ে অভিভূত নেতারা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “কংগ্রেস কর্মীরা লাগাতার পরিশ্রম করেছেন এই ন্যায় যাত্রা সফল করতে। সেই সঙ্গে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে আবেগে আজ শহর জনসমুদ্র দেখেছে।”

রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’য় নিরাপত্তা দিতে জলপাইগুড়িতে দেখা গেল রাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনীকে। রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা অধিকর্তার কর্মীদের দেখা যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকে এই বাহিনী। এ ছাড়াও এ দিন জেলা পুলিশের তাবড় অফিসারদের নিয়ে আসা হয়েছিল রাহুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে।

এ দিন রাহুলের গাড়ির সামনে থেকে দু’দিকে দড়ি ধরে গোটা যাত্রাপথে এগিয়েছেন জেলা পুলিশের একাধিক বাহিনীর কর্মী। মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশ বাহিনী। রাস্তার ভিড় যাতে কোথাও যাত্রায় হামলে না পড়ে তার জন্য রাস্তার দু’দিকেও দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মীদের একটি বলয় ঘিরে ছিল মিছিলকে। ফলে কোনও সমস্যাও হয়নি।

এ দিন এর পরেই শিল্প সমিতিপাড়ায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে বিশেষ বাসে উঠে শিলিগুড়ি রওনা দিয়েছেন রাহুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন