জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতিতে সরকার মনোনীত প্রতিনিধি করে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। তারপরে দলের সিদ্ধান্তে ওই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ নেন। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার দুই জেলাতেই দল তাঁকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পদেও বসানো হয়েছে তাঁকে। এবার আলিপুরদুয়ার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীকে।
নাম ঘোষণার পরেই শনিবার সকালে আলিপুরদুয়ার কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন সৌরভবাবু। অন্যদিকে, এ দিন আলিপুরদুয়ারের বিদায়ী কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় দাবি করেছেন, কংগ্রেসের হয়ে প্রার্থী হওয়ার কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। যদিও, ভবিষ্যতের পদক্ষপের প্রসঙ্গে দেবপ্রসাদবাবু জানিয়েছেন কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
দেবপ্রসাদবাবুর ঘোষণা নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ ‘নিশ্চিন্ত’ হলেও, সৌরভবাবুর সামনেও একাধিক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বলে তাঁদের দাবি। দলের একাংশের প্রশ্ন, নিজের প্রচার সামলে দুই জেলার অন্য আসনে সময় দিতে পারবেন তো তিনি? বিশেষ করে দুই জেলার বেশ কিছু কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা সামলাতেও দলের সভাপতিকে প্রয়োজন। নিজের প্রচারে ব্যস্ত সৌরভবাবু অন্য কেন্দ্রের বিক্ষুব্ধদের কতটা সামলাতে পারবেন তা নিয়েও দলের একাংশে সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও, দলেরই আরেকটা অংশের দাবি উত্তরবঙ্গে দলীয় রাজনীতির নিজস্ব সমীকরণের কথা মাথায় রেখেই সৌরভবাবুকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
গত লোকসভা ভোটেও সৌরভবাবুকে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার দুই কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়েছিল দল। দুই কেন্দ্রেই তৃণমূলের প্রার্থী জিতেছে। জলপাইগুড়ি পুরসভাতেও একক বোর্ড গড়েছে তৃণমূল। সে হিসেবে সৌরভবাবুকে বিধানসভা ভোটে টিকিট দিয়ে পুরস্কৃত করা হতে পারে বলে তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশ দাবি করেছিলেন। অন্যদিকে, শিলিগুড়ির পুরভোটে দলের হারের পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে সৌরভবাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই অঙ্কে সৌরভ-অনুগামীদের কয়েকজনের দাবি, উত্তরবঙ্গে সংগঠনে সৌরভবাবুকে সমান্তরালভাবে তুলে ধরতে চাইছে রাজ্য নেতৃত্ব। জনপ্রতিনিধি না হলে প্রশাসনিক কাজকর্মে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই বিধায়ক পদের টিকিট সৌরভবাবু পেয়েছেন বলে তৃণমূলের একাংশ নেতার দাবি।
এদিন সৌরভবাবু বলেন, “ দলের দুই জেলার সভাপতি হলেও নির্বাচন আমার বুথ ও ব্লক নেতৃত্ব ও কর্মীদের উপর নির্ভর করেই লড়ব। নির্বাচনের জন্য আমাদের সংগঠন তৈরী। তাছাড়া নিজের প্রচার সেরে অন্য প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করতে কোন অসুবিধে হবে না। গত লোকসভা ভোটে আমি দুই জেলার প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেছি।”
অন্যদিকে জেলা রাজনীতিতে কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকারের সঙ্গে দেবপ্রসাদবাবুর দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে দলেই জল্পনা রয়েছে। দেবপ্রসাদবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এখনও বাম-কংগ্রেস জোট দিল্লি থেকে হয়নি। হাইকমান্ড এই জোটের অনুমোদন না দিলেও আমি অনুগামীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করব। হাইকমান্ডের অনুমোদন ছাড়া রাজ্য স্তরে জোট করলেও আমি আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।’’
নিজের ক্ষোভ প্রসঙ্গে দেবপ্রসাদবাবু বলেন ‘‘দলের প্রদেশ নেতৃত্ব আলিপুরদুয়ারে এসে সভা করলেও, আমাকে ডাকা হয়নি। কোনরকম সৌজন্য দেখানো হয়নি। সেই দলে প্রার্থী হওয়ার প্রাসঙ্গিকতা নেই।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘দেবপ্রসাদবাবু যা বলছেন তা সবই সংবাদমাধ্যমে দেখছি। তাই এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’