গেলেন শিখা, যাবেন শিবও

বৃহস্পতিবার বিকালে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং মুকুলবাবুর হাত থেকে পতাকা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৯
Share:

দলবদল: পতাকা হাতে বিজেপিতে যোগ দিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেত্রী শিখা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: স্বরূপ সরকার

তৃণমূলের অন্দরের আশঙ্কা সত্যি করে মুকুল রায়ের সভায় বিজেপিতে যোগ দিলেন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির প্রাক্তন তৃণমূল নেত্রী তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শিখা চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকালে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং মুকুলবাবুর হাত থেকে পতাকা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন তিনি। তবে আরও অনেকেই যোগ দেবেন বলে বিজেপির তরফে প্রচার হলেও আদতে কিন্তু তেমনভাবে ঘর ভাঙেনি তৃণমূলের। শিখাদেবীর সঙ্গে এলাকার জনা ১৭ বাসিন্দা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তের শ’ দেড়েক পুরুষ এবং মহিলাও এ দিন দলবদল করেন বলে বিজেপি নেতারা জানান। যদিও তাঁদের মধ্যে শিখাদেবীর মত উল্লেখযোগ্য কোনও মুখ ছিল না।

এ দিকে মুকুল রায়ের জেলা সফরের আগেই দল থেকে পদত্যাগ করলেন ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শিবশঙ্কর দত্ত৷ ৩০ ডিসেম্বর মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন শিবশঙ্করবাবু৷

Advertisement

গত বুধবারই দল এবং পদ ছেড়েছিলেন শিখাদেবী। তখন স্পষ্ট না করলেও বিজেপিতেই যে যাচ্ছেন তা রাতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এর সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র ও যুবদের একাংশ বিজেপিতে যোগ দিতে পারে বলে প্রচার হয়েছিল। গ্রামীণ এলাকার কিছু জনপ্রতিনিধিও দল ছাড়তে পারেন বলে চাউর হয়। বিজেপি’র তরফেও নকশালবাড়ি, মাটিগাড়ার শাসক দলের বিভিন্ন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছিল।

গভীর রাত পর্যন্ত চেষ্টা চললেও এ দিন অবশ্য তেমন কোনও নেতানেত্রীকে বিজেপির মঞ্চে দেখা যায়নি। মুকুলবাবু সভায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের যখন কেউ ছিল না, ডাবগ্রামে জনপ্রতিনিধি হন শিখা। আজ তিনি আর দলে থাকতে পারছেন না। এ ভাবে রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ডাবগ্রামের পঞ্চায়েতও দখল করবে বিজেপি।’’ এ দিন বাঘাযতীন পার্কে মিছিল করে মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলীয় কর্মী সমর্থকরা মাঠে আসেন।

দিলীপ, মকুলরা এ দিন পাহাড় সমস্যার জন্য তৃণমূল নেত্রীকে দুষেছেন। মদন তামাঙ্গ মামলায় বিনয় তামাঙ্গদের ধরার দাবি তুলেছেন। তেমনিই, অমিতাভ মালিক খুনের ঘটনা এবং এসজেডিএ দুর্নীতি মামলা নিয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েও সরকারের সমালোচনা করেন। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে রোজভ্যালির সম্পর্ক নিয়েও কটাক্ষ করেন। দুপুর দু’টোর সভা শুরু হয় চারটে নাগাদ। অন্ধকার নেমে আসায় দিলীপবাবু, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়েরা বক্তব্য রাখার সময় মাঠের অধিকাংশ চেয়ারই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।

বিজেপির প্রায় ৪ ঘন্টার সভা চলাকালীন জেলা সভাপতি গৌতম দেবের নেতৃত্বে জেলা তৃণমূলের বৈঠকও হয়। আজ, দুপুরে বাঘাযতীন পার্ক থেকেই শহরে সংহতি, ঐক্য মিছিল করবে তৃণমূল। তেমনিই, গ্রামে ও শহরে মিছিল, মিটিং চলবে বলে ঠিক হয়েছে। এই সভা চলার পাশাপাশিই বিজেপির সভা, দলবদল, ভিড়, বক্তব্য নিয়ে খোঁজ নিতে থাকেন নেতারা। এমনকি, কলকাতায় রিপোর্টও দেওয়া হয়। পুলিশের তরফেও লাইভ রেকর্ডিং চলে। শেষপর্যন্ত শিখাদেবী ছাড়া কোনও উল্লেখযোগ্য নাম সামনে না আসায় স্বস্তি আসে শাসক শিবিরে। অনেকেই রাতে বলেন, ‘‘উৎসবের সময় শীতের বিকালে সভা করাটাই বিজেপিকে ডুবিয়েছে। লোকও তেমন হয়নি। একজন ছাড়া তো তেমন কেউ যোগই দিল না।’’

তবে দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘আমরা কাউকে আটকে রাখিনি। যিনি যা ভাল বুঝেছেন সেটা করছেন। বিজেপির সভা নিয়ে কিছু বলার নেই। শুধু বলব, শিলিগুড়ির মানুষ বিভেদের রাজনীতির পাশে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন