ফের সন্ত্রাসের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে

কোচবিহারের তুফানগঞ্জ পুরসভায় নির্বাচনী সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠল রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই শহরে বিজেপি ও সিপিএম এর দুই কর্মী আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে পোস্টার সাঁটানোর সময় যুধিষ্ঠির পাল নামে তাদের এক কর্মীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:০২
Share:

(বাঁ দিকে) সিপিএম কর্মীর অসুস্থ বাবা নরেন্দ্রনাথ দাস। তৃণমূলের এই ব্যানার ছেড়া হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

কোচবিহারের তুফানগঞ্জ পুরসভায় নির্বাচনী সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠল রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

গত ২৪ ঘণ্টায় এই শহরে বিজেপি ও সিপিএম এর দুই কর্মী আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে পোস্টার সাঁটানোর সময় যুধিষ্ঠির পাল নামে তাদের এক কর্মীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থক মানিক দাসের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম।

বাম শিবিরের অভিযোগ, ওই ঘটনার জেরে এদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন মানিকবাবুর বৃদ্ধ বাবা নরেন্দ্রনাথ দাস। তাঁকেও মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এলাকায় তৃণমূলের নির্বাচনী পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়ার জন্য মানিকবাবুর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বাড়িতে গিয়ে হেনস্থা করা হয়।

Advertisement

বিজেপির অভিযোগ, বুধবার রাত ১০ টা নাগাদ চার নম্বর ওয়ার্ডে বাজার লাগোয়া এলাকায় বছর ৫০ এর যুধিষ্ঠিরবাবু একাই দলের প্রার্থীর হয়ে পোস্টার, ব্যানার সাঁটার কাজ করছিলেন। কামারপট্টির কাছে আচমকা তাঁর ওপর হামলা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে যান তিনি। পরে দল ও পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

বৃহস্পতিবার তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুধিষ্ঠির বাবু বলেন, “পোস্টার সাঁটার কাজে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে পেছন থেকে আমার উপর হামলা চালানো হয়। মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। দুটি সেলাই পড়েছে।”

সিপিএম সমর্থক মানিক দাস বলেন, “আমি এলাকায় তৃণমূলের পোস্টার, ব্যানার, ছিঁড়েছি বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে একদল লোক টিউশন পড়ানোর সময় আমার বাড়িতে ঢুকে গোলমাল শুরু করে। হুমকি দেওয়া হয়। আতঙ্কে বাবা সংজ্ঞা হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।” ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অম্লান বর্মা অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের পোস্টার, ব্যানার ছেঁড়ায় একদল বাসিন্দা ক্ষুব্ধ হয়ে কারা এসব করেছে জানতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। সহানুভূতি আদায়ে অযথা এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করান হয়।’’

বৃহস্পতিবার বিজেপির তরফে ওই ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। সিপিএমের তরফে অবশ্য সন্ধ্যে পর্যন্ত লিখিতভাবে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়নি। সিপিএমের দাবি, মৌখিকভাবে পুলিশকে বিষয়টি জানান হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।” তুফানগঞ্জের মহকুমা শাসক পালদেন শেরপা বলেন, “এলাকায় পুলিশের টহলদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।’’

এদিন দুপুরে তুফানগঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে জখম বিজেপি সমর্থককে দেখতে যান এলাকার বিদায়ী সিপিএম পুর চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়াল। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘গোটা এলাকায় তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। প্রচার করা যাচ্ছে না। আমার বাড়ির ওয়ার্ডের বাসিন্দা যুধিষ্ঠিরবাবুর সঙ্গে পরিচয় রয়েছে বলে খোঁজ নিতে যাই। তিনি কোন দল করেন সেটা বড় কথা নয়।’’

বিজেপির কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি বিমল সরকার বলেন, ‘‘প্রচার করার অপরাধে তৃণমূলের লোকেরা যুধিষ্ঠিরবাবুর ওপর হামলা চালান। সিপিএমের বিদায়ী পুর চেয়ারম্যান সৌজন্য রক্ষায় গিয়েছেন। এটার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’ তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘ জেলার সর্বত্র মানুষ উন্নয়নের পাশে দাঁড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই নিশ্চিত পরাজয় বুঝেই বিরোধীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। ওই ব্যাপারেও সিপিএম ও বিজেপির অশুভ আঁতাত হয়েছে।’’

এদিকে দিনহাটার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ফ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে পানের পিক ও চুইংগাম লাগানর অভিযোগকে কেন্দ্র করে এদিন উত্তেজনা ছড়ায়। ওই ব্যাপারে পুলিশের কাছে তৃণমূল অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন