টাকা রুখতে আসরে টিএমসিপি

কলেজের গেটের সামনে হোর্ডিং। বড় বড় করে লেখা রয়েছে, ‘ভর্তির জন্য আর্থিক লেনদেন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সৌজন্য, কলেজের সাধারণ সম্পাদক।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৭
Share:

ঘোষণা: এমন পোস্টারই দেওয়া হয়েছে কলেজে। নিজস্ব চিত্র

কলেজের গেটের সামনে হোর্ডিং। বড় বড় করে লেখা রয়েছে, ‘ভর্তির জন্য আর্থিক লেনদেন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সৌজন্য, কলেজের সাধারণ সম্পাদক।’

Advertisement

ওই কলেজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে। কয়েকজন ছাত্র ফর্ম ফিল আপের জন্য ওই কলেজে ঢুকতেই এগিয়ে গেল কয়েকজন। হোর্ডিং দেখিয়ে পরিচয় পর্ব মিটিয়ে নিয়ে ‘হাতজোড়’ করে তাঁরা জানিয়ে দিলেন, ‘কেউ টাকা চাইলে আমাদের জানাবে। কাউকে কোনও টাকা ভর্তির জন্য দেবে না।”

কোচবিহারের বাণেশ্বর কলেজে এমন ভাবেই ভর্তিতে টাকার লেনদেন আটকাতে আসরে নেমেছে টিএমসিপি। তাদের দাবি, সব কলেজেই ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রীদের এমন বার্তা দিচ্ছেন তারা। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ, দিনহাটা থেকে শুরু করে কোচবিহারের একাধিক কলেজে অনার্স পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। একেকটি আসনের ৫০ হাজার টাকা পর্য়ন্ত নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

Advertisement

শাসক দল তো বটেই কলেজ কর্তৃপক্ষগুলিও এমন অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। বাণেশ্বর কলেজের অধ্যক্ষ নরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “এমন কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। নিয়ম মেনেই ভর্তি হচ্ছে। সচেতনতামূলক একটা কলেজে ছাত্র সংসদের তরফ থেকে করছে। এটা তারা করতেই পারে।”

কোচবিহারের কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, “অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া হচ্ছে। অনার্সের জন্য ৯ দফায় ও পাস কোর্সে ভর্তির জন্য পাঁচ দফায় কাউন্সেলিং করে আসন পূরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার পরেও কোনও আসন ফাঁকা থাকলে অতিরিক্ত কাউন্সেলিং করানো হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়ম মেনে সব কাজ হচ্ছে।” টিএমসিপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক সাবির সাহা চৌধুরীর দাবি, বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির কোনও অস্তিত্ব নেই। তিনি বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। এখন আমরা সব সময় ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করি।”

এসএফআইয়ের কোচবিহার জেলা সম্পাদক শুভ্রালোক দাস অভিযোগ, বর্তমানে কলেজগুলি আলাদা আলাদা ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করেছে। ওই প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে কোনও কাজে লাগছে না। কাউন্সেলিংয়ের মাঝামাঝি থেকেই দুর্নীতি শুরু হয়ে যাচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কলেজগুলির অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া থাকলেও কাউন্সেলিংয়ের মাঝামাঝির সময় থেকেই দুর্নীতি শুরু হয়। বিষয় অনুযায়ী টাকা নেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে।” তিনি জানান, ভয়ে স্পষ্ট অভিযোগ করতে কেউ রাজি হচ্ছে না বলেই দুর্নীতি কমছে না।

ডিএসও-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক স্বপন বর্মন বলেন, “কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতি মারাত্মক মাথাচাড়া দিয়েছে। ফলে ভাল ফল করেও অনেক ছাত্র বঞ্চিত হচ্ছে। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের লোকেরাই এর সঙ্গে জড়িত।”

বাণেশ্বর কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক তথা টিএমসিপি নেতা উত্তম ঘোষ দাবি করেন, অনেক সময় বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কেউ কেউ ছাত্রছাত্রীদের নানা ভাবে উত্যক্ত করার চেষ্টা করেন। তাই তাঁরা এমন ভাবে প্রচারে নেমেছেন। তিনি বলেন, “কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাই একমাত্র ভিত্তি। কলেজের ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও রকম অর্থনৈতিক লেনদেন বা কোনও অসঙ্গতিমূলক আচরণ বাঞ্ছনীয় নয়। তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement