নেওড়ার জঙ্গলে জোঁক থাকারই কথা। সে জন্য রেডি হয়ে এসেছিলাম। সেই জোঁকের দেখা মেলায় অবাক হইনি। সে জন্য সাবধান থাকতে হচ্ছে। কিন্তু, এখানে বোঝার উপরে শাকের আঁটির মতো দেখা মিলেছে এঁটুলি পোকার। তাই এখন আমরা ‘হাই অ্যালার্ট’-এর মধ্যেই সমীক্ষা চালাচ্ছি। দলে রয়েছেন পতঙ্গ, প্রাণী, উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা অনেকেই।
এখন যেখানে রয়েছি তার উচ্চতা সাড়ে তিন হাজার ফুটের মতো। আসালেতে প্রথম শিবিরের পর নেওরাভ্যালির মৌচুকিতে এখন দ্বিতীয় ক্যাম্প। মঙ্গলবার থেকে জীব বৈচিত্রের সন্ধানে আমরা এই শিবিরে রয়েছি। ঝোড়ো হাওয়া বইছে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
বুধবার পর্যন্ত যা নথিভুক্ত হয়েছে তাতে মাকড়সা পাওয়া গিয়েছে ৫৬ প্রজাতির। যার মধ্যে রয়েছে ওয়াইদিকোসা গোত্রের মাকড়সা। এ ধরনের মাকড়সা আমাদের দেশে প্রথম দেখা গেল। ৫৪ প্রজাতির মাছির দেখা ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে।
প্রজাপতি মিলেছে ৬৫ প্রজাতির। ৯ টি প্রজাতির ফড়িং নজরে এসেছে। যে সব সরীসৃপ এখনও পর্যন্ত নথিভুক্ত করা গিয়েছে তাতে ৮টি প্রজাতি রয়েছে। ৪টি প্রজাতির উভচর এবং ৯ রকমের প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেখা গিয়েছে।
এখনও তৃতীয় ক্যাম্প বাকি। তাই সংখ্যা দীর্ঘায়িত যে হবে, তা বলাই বাহুল্য। এই পাহাড়, বনাঞ্চলে আমরা ১২০ রকমের প্রজাতির পাখি দেখে ফেলেছি। গাছপালা যে সমস্ত নথিভুক্ত করা হচ্ছে তাতে বিশেষজ্ঞরা ২৪৮ প্রজাতির উদ্ভিদ দেখছেন। তার মধ্যে বড় গাছ থেকে ওষধি, সার্ব, বাঁশ বভিন্ন ধরনের ফার্ন, অর্কিডও রয়েছে। আপাতত ২৮ রকমের অর্কিড দেখেছি। যদিও অর্কিডের মরসুম যদিও এটা নয়। তবু জঙ্গলের মধ্যে নানা ধরনের অর্কিড নজরে পড়ছে।
এখান থেকে আরও বেশি উচ্চতায় ডোলেতে তৃতীয় ক্যাম্প হবে। ডোলের উচ্চতা ৬৬০০ ফুট। আরও উপরে সাড়ে সাত হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত জীব বৈচিত্র্য খোঁজা হবে। আরও অসংখ্য প্রজাতির কীটপতঙ্গ, প্রাণী রয়েছে বোঝা যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যই অপেক্ষা করে রয়েছি। তাদের মধ্যে সম্পূর্ণ অজানা কেউও থাকতে পারে।
রাজ্যের কোনও বনাঞ্চলে এ ভাবে জীব বৈচিত্রের সন্ধান এটাই প্রথম। এখনও অবধি আমাদের দলের সকলেই ঠিকঠাক আছেন। বনের মধ্যে সমীক্ষা চালানোর অভিজ্ঞতা কমবেশি সকলেরই আছে। তাই জোঁক, এঁটুলি সামলে কাজ এগোচ্ছে। (চলবে)