গোঁসাইহাট ঝিলে এই ছবি এখন অতীত। ছবি: নিজস্ব চিত্র
উত্যক্ত করা হতো পরিযায়ী পাখিদের। চলত শিকারও। তার জেরে কমে যায় পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা। শেষ পর্যন্ত বন্ধও হয়ে গিয়েছে চালু পর্যটন কেন্দ্র। তারপরেও ফেরেনি হুঁশ। বন্ধ পর্যটন কেন্দ্রেই অবাধে চলছে পাখি শিকার।
ডুয়ার্সের মরাঘাট জঙ্গলের গোঁসাইহাট পক্ষী পরিচিতি কেন্দ্র ও ইকো পার্ক পিকনিক স্পটের অবস্থা এখন এরকমই। পরিকাঠামো উন্নতির কারণ দেখিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই দু’টি পর্যটন কেন্দ্র।
সচেতনতার অভাবে প্লাস্টিক ও আবর্জনায় রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের মহানন্দা, করলার মতো নদী। বারবার ধাক্কা যাচ্ছে নির্মল গ্রাম তৈরির প্রচেষ্টাও। সেই তালিকায় আরেকটি সংযোজন এই ঘটনা। পর্যটন কেন্দ্র দু’টি ঘিরে জমে উঠেছিল এলাকার অর্থনীতিও। যা এখন ধাক্কা খেয়েছে। অভিযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই জলাশয়ের পাশে নজরদারির জন্য থাকছে না কোনও বনকর্মী। দীর্ঘদিন ধরে বনদফতরের পক্ষ থেকে কোনও লভ্যাংশ না পাওয়ায় এলাকার বন সুরক্ষার কমিটিও জঙ্গল ও জলাশয় রক্ষার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। এই সুযোগে এলাকার কিছু বাসিন্দা বড়শি দিয়ে শিকার করছে পাখি। যা প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ।
এলাকার বাসিন্দা তথা বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য রবি রাভা বলেন, “অনেকবার বনাধিকারিকদের গোসাইহাটের জলাশয়ে নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করেছি।’’ গোসাইহাটের প্রতি বনদফতর বৈষম্য করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি, আশপাশের এলাকার কিছু বাসিন্দা গুলতি ও বড়শি দিয়ে পাখি মারছে। তবে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই ওই পিকনিক স্পটটি থাকা নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগ রয়েছে। স্কুল লাগোয়া হওয়ায় মাইক-বক্সের শব্দে পড়ুয়াদের খুব অসুবিধা হতো বলে জানান তাঁরা।
অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল আগেই। ২০০৭ সালে তৈরি হয় ওই পক্ষী পরিচিতি কেন্দ্র ও ইকো পার্ক। পাখি দেখার জন্য জলাশয়ের পাশেই তৈরি হয় দু’টি ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ার হাউসে পর্যটকদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থাও ছিল। করা হয় পাশের জলাশয়ে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও। জঙ্গলের মধ্যেই ২০০ মিটার দূরে গোসাইহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষা ফাঁকা জায়গায় তৈরি হয় পিকনিক স্পট। উদ্বোধনের পর থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে গোঁসাইহাটে। কিন্তু নজরদারির অভাবে পর্যটকেরা ও এলাকার বাসিন্দারা পাখিদের ঢিল ছুড়ে বিরক্ত করে বলে অভিযোগ। ওঠে পাখি শিকারের অভিযোগও। পিকনিকের মরসুমে মাইক ও বক্সের আওয়াজে সমস্যায় পড়ে পরিযায়ী পাখিরা। ফলে কমতে থাকে পাখিদের সংখ্যা। এছাড়া টাওয়ার হাউসের ঘটে চুরির ঘটনাও। টাওয়ার হাউসের কাঁচ ও কাঠের দরজা-জানালা ভেঙে চুরি হয়ে যায় আসবারপত্র। ভেঙে ফেলে রাখা হয়েছে বনদফতরের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আনা অনেক ছবিও। শেষ পর্যন্ত নজরদারি কর্মীর অভাবে বনদফতর জলাশয়ে পর্যটকদের প্রবেশ ও ইকো-পার্ক বন্ধ করে দেয়।
যদিও পক্ষী পরিচিতি কেন্দ্র ও ইকো পার্ক ফের পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘পরিকাঠামো গড়ার জন্য সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ কিন্তু পরিযায়ী পাখিদের শিকার করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।