হেঁটেই শিলিগুড়ি পৌঁছতে হল এমন বহু পর্যটককে। শনিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
তিনদিন আগে গ্যাংটকের কর্মস্থল থেকে কোচবিহারের শীতলখুচিতে গিয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী রমেশ বর্মা। মেয়ে, স্ত্রী ও শাশুড়ি ছিলেন গ্যাংটকেই। শনিবার ফেরার জন্য সকাল ১১টা থেকে চারঘণ্টা সিকিম পরিবহণ নিগমে দাঁড়িয়েও বাস পাননি। শেষে, পরিচিত এক সেনাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের গাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করেন।
সিকিমের বিভিন্ন কলেজ, ভবনে নির্মাণকাজের ঠিকাদারের কাজ করেন উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিকাশ প্রসাদ। ১১ জন শ্রমিক গ্যাংটকের পথে রানিপুলে আছেন। বাড়িতে টাকা দিয়ে ফেরার বাস পাননি বিকাশবাবু। শেষে গ্যাসের ট্রাকে হাজার টাকা দিয়ে যান। বললেন, ‘‘কিন্তু পরিবার থাকলে যে কী করতাম কী জানি!’’
যাঁরা যেতে চেয়েছেন শুধু তাঁরাই নন, যাঁরা ফিরতে চেয়েছেন তাঁদের ভোগান্তিও একই।
রবিবার ভোরে শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির হোটেলে রাবাংলা থেকে ফিরেছেন বারাসতের শুভ্রনীল বিশ্বাস ও তাঁর পরিবার। বিকেলের বিমানের টিকিট আগাম কাটাই ছিল। শুভ্রনীলবাবু জানান, সরকারি বাস, স্ট্যান্ডে গাড়ি নেই। হোটেল থেকে গাড়ি ঠিক করে দিয়েছিল। ৭ হাজার টাকা নিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ঘুরতে গিয়ে এমন ভোগান্তি কোনদিন হয়নি। সরকারি একটা বাস পাইনি।’’
যদিও সমতলের কোথাও সিকিমের গাড়ি আটকানো, বিক্ষোভ কিছুই হয়নি বলে জানিয়েছেন এতোয়ার সভাপতি সম্রাট সান্যাল। তিনি বলেন, ‘‘সিকিমের বাস, গাড়ি না চলায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।’’
গত শুক্রবার ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে সমস্ত ধরনের গাড়ি চলাচলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সমতলের ছোট গাড়ির চালকেরা। সিকিম পরিবহণ নিগমের (এসএনটি) দরজা আটকে বিক্ষোভও হয়। সিকিমের ছোট গাড়িও আসতে বারণ করা হয়। পর্যটকদের সিকিম যেতে বারণ করা পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। বিকালে আশ্বাস পাওয়ার পর ১২টি বাস গ্যাংটকে ফেরে। তাই বাস চলবে ভেবেই সকাল থেকে জংশন এসএনটিতে ভিড় করে যাত্রীরা। তবে টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা জানান, নিরাপত্তার অভাবে বাস গ্যাংটক যাবে না। কয়েকশো যাত্রী তখন টার্মিনাসে। এসএনটি সহকারি জেনারেল ম্যানেজার এইচএল লামিচানে বলেন, ‘‘চালকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাস চালানো হয়নি।’’
বিকালে রংপো থেকে দুটি বাস শিলিগুড়ি পৌঁছলে তা যাত্রী ছাড়াই ফিরেছে। তবে সেই বাসগুলি যাত্রীদের শালুগাড়ায় নামিয়ে দেয়। অটো, টোটো ধরে, হেঁটে শহরে ঢোকেন যাত্রীরা। শালুগাড়ার তরাই ট্যাক্সি ড্রাইভার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিসান তামাঙ্গের অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার চম্পাসারিতে একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ দোষীদের না ধরলে আজ, রবিবার আমরা শিলিগুড়ি-গ্যাংটক রুটে পরিবহণ ধর্মঘট করব।’’ থানায় পৌঁছান সমতলের গাড়ি চালকেরাও। আলোচনায় দুই পক্ষই নিরাপত্তার দাবি তোলেন। রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’