২০০৮ সালের ৮ জুনের পর ন’টা বছর, ২০১৭ সালের ৮ জুন। সে দিন ছিল পাহাড় ছাড়ার হুমকি, এ বার অগ্নিগর্ভ পাহাড় ও বন্ধ। শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস লাগোয়া জংশন, মাল্লাগুড়ির ছবিটা একই। রাত থেকেই পাহাড় ছাড়া শুরু হয়েছিল পর্যটকদের। গাড়ি থেকে নেমেই হোটেলের সামনের ফুটপাথেও বাচ্চাদের কোলে নিয়ে মহিলাদের বসে থাকতে দেখা যায়। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড, পর্যটন দফতরের অফিস খোলা রাখতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত।
অফিসার, পর্যটন সংগঠনগুলির আশঙ্কা ছিল, শুক্রবার ভোর হতেই বাঁধ ভাঙবে। তাই হল। ভোর ৪টার মধ্যে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ল বাসস্ট্যান্ডে। সফর কাটছাঁট করে কেউ কলকাতা ফিরতে চান, কেউবা গ্যাংটকে আবার অনেকে ডুয়ার্সে যাওয়ার বাস-ছোট গাড়ির খোঁজে নামেন। তিলধারণের জায়গা ছিল না বাসস্ট্যান্ডে। ব্যাগ, ট্রলি ব্যাগের ছড়াছড়ি। কাউন্টারের সামনে শিশুদের নিয়ে গরমে নাজেহাল পর্যটকদের একাংশ। এরমধ্যে সিকিম পরিবহণ নিগম বাস পরিষেবা বন্ধ রাখায় সমস্যা আরও বাড়ে। এলাকায় পৌঁছন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। প্রথমে রাস্তায় পুলিশের দেখা নেই বলে অভিযোগ পৌঁছায়। কয়েকজন পর্যটক এসে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। সুকনায় গাড়ি আটকানোর খবরও পৌঁছয়।
ফোনে পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা, পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, পর্যটনের যুগ্ন অধিকর্তা সুনীল অগ্রবালকে নানা নির্দেশ দিয়ে কিছুটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন মন্ত্রী। নিয়মিত মেসেজে যোগাযোগ করতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। কলকাতাগামী, দার্জিলিংগামী বাস ছাড়া শুরু হয়। এরমধ্যে পযটন সংগঠন এতোয়ার সম্রাট সান্যাল, সন্দীপন ঘোষ-সহ সদস্যরা সিকিম পরিবহণ নিগমে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পরে মন্ত্রী ও পরিবহণ সচিবের উদ্যোগে সিকিমগামী বাসও চালু হয়। সরকারি বাসে কোনও টিকিট লাগবে না বলে মাইকে ঘোষণাও হয়। পুলিশও তড়িঘড়ি রাস্তায় নেমে হেলপলাইন চালু করে দেয়। বিকালে স্ট্যান্ডে গিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে তদারকি করেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারি, এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রববর্তীরাও। রাতে আরেক দফায় এলাকায় ঘোরার পর পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে কাজ হচ্ছে। আমরা সব সময় পর্যটকদের পাশে রয়েছি।’’
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন বর্ধমানের অরিন্দম মিত্র, সায়েন্স সিটির সঞ্জীব দে। মোট ১৮ জনের দল। তাঁরা বলেন, ‘‘পুরো পরিকল্পনাটাই পাল্টে গেল। গ্যাংটক ঘুরে বাড়ি ফিরব ভাবছি।’’ লখনউ থেকে স্ত্রী চারু মেয়েকে নিয়ে প্রথমবার দার্জিলিঙে এসেছিলেন নীতিন ট্যান্ডন। তিনি জানান, দার্জিলিং প্রথম ঘোরার স্মৃতিটা এমন হয়ে যাবে ভাবিনি। গাড়ি দ্বিগুণ ভাড়া চায়। বাসে এখনও জায়গা পায়নি। আবার কলকাতার বাসিন্দা অনিন্দ্য দত্ত বলেন, ‘‘আর কোথাও নয়, সোজা সান্দাফু চলে যাচ্ছি।’’ এনবিএসটিসি-র অফিসারদের কর্মীদেরও অনেকেরই নাওয়া খাওয়ার সময় মেলেনি।
বাসস্ট্যান্ডের সামনে ভোর থেকেই মঞ্চ খাটিয়ে দলের সহকর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার, দীপক শীল, বিকাশ সরকারেরা। পর্যটকদের জন্য মাইকে দিনভর বাসের ঘোষণা, সময়সূচি, গাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করে যান।
কন্ট্রোল রুম
পর্যটন দফতর
(০৩৩)২২১০০০৯৮ (০৩৫৩)২৫১১৯৭৪
পুলিশ স্পেশাল হেল্পলাইন
বাগডোগরা
৮১৪৫৮২৭০৩৩
৭৯০৮৪৮৩৩২৯
এনজেপি
৯৯৩৩১৪৩৮৩৩
৯৪৩৪১৪৫২৬০
তেনজিং নোরগে
৯৮৩৬৪৬২৪০৬/ ৯৭৩৩০১৫২১১
৯৪৩৪৫৫১৪৩৩
ট্রাফিক
৯৮৩৬৪১৯১৬৬
হেলপ লাইন ইনচার্জ
গৌরব লাল, ডেপুটি কমিশনার
৮১১৬৬০৪৬৫১