এলইডি স্ক্রিনে উৎসবের মেজাজ ম্যালে

বিশাল এলইডি স্ক্রিনে বিকেল থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ চলেছে। চারপাশে স্টেডিয়ামের গমগম। সন্ধ্যে নামার পরে স্ক্রিন জুড়ে পুরনো ইংরেজি গানের আসর। অনেকটা দূর থেকেই ভেসে আসছে ড্রাম বিট। হোটেল ক্যালির্ফোনিয়ার সুরের তালে হাততালি দিচ্ছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পর্যটকেরা।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:২২
Share:

সন্ধের পরেও স্ক্রিনের সামনে পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট ম্যাল। ছবি: সন্দীপ পাল।

বিশাল এলইডি স্ক্রিনে বিকেল থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ চলেছে। চারপাশে স্টেডিয়ামের গমগম। সন্ধ্যে নামার পরে স্ক্রিন জুড়ে পুরনো ইংরেজি গানের আসর। অনেকটা দূর থেকেই ভেসে আসছে ড্রাম বিট। হোটেল ক্যালির্ফোনিয়ার সুরের তালে হাততালি দিচ্ছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পর্যটকেরা। হঠাৎই বৃষ্টি শুরু হওয়ায়, টাপটপ নানা রঙের ছাতায় ভরে গেল গোটা এলাকা। বৃষ্টি মাথাতেই ম্যাল-চৌরাস্তায় পর্যটকেরা ঘোরাফেরা করছেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি উধাও। উঁচু বাতি স্তম্ভের লাল-নীল এলইডি আলো, প্রায় ৪০ ফুট উঁচুতে জায়েন্ট স্ক্রিন ছুঁয়ে নেমে আসছে কুয়াশা। ক্যামেরার ফ্লাশ, ধোঁয়া ওঠা কফি কাপে ম্যাল সরগরম। পর্যটক ঠাসা গ্রীষ্মের দার্জিলিঙের প্রতিদিনের সন্ধ্যায় দেখা যাচ্ছে এমনই দৃশ্য।

Advertisement

সমতলে যখন সকাল থেকেই দাবদাহ শুরু শুরু হয়ে যাচ্ছে, তখন কুয়াশা নিয়ে ঘুম ভাঙছে দার্জিলিঙের। কখনও কয়েক পশলা বৃষ্টি, কখনও আবার রোজ ঝলমলে। তবে বৃষ্টি-রোদ বা কুয়াশা সবই ক্ষণস্থায়ী। স্বাভাবিক ভাবেই পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে দার্জিলিঙে। বর্ষার শুরুতেও দার্জিলিঙের হোটেলগুলি ঘর পাওয়া দুষ্কর। সুযোগ বুঝে একাংশ হোটেল ঘর ভাড়ার দরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মেঘ থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে না। যদিও, তা নিয়ে পর্যটকরা খবর একটা হতাশ নয়। জুলাই মাসের দুপুরে কুয়াশা ঘেরা পাকদন্ডি রাস্তায় হাঁটতে পেরেই পর্যটকেরা উচ্ছ্বসিত। সেই সঙ্গে বাড়তি আমেজ এনে দিয়েছে ম্যালের মুক্তমঞ্চের উপরে লাগায়ো জায়েন্ট এলইডি স্ক্রিন। জিটিএ-এর তরফে এই সম্প্রতি স্ক্রিনটি লাগানো হয়েছে। তাতে সকাল বেলায় খবরের চ্যানেল, দুপুরে খেলা এবং সন্ধেয় গানবাজনা চলে। তার পরে ডলবি বক্সে গানের শব্দ এবং উঁচু স্ক্রিনের ছবিতে ম্যালজুড়ে উৎসবের আমেজ।

পর্যটকদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে ম্যালে পুলিশ টহলও বাড়ানো রয়েছে। সন্ধ্যে ৭টা থেকেই চৌরাস্তার দোকানগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। সে কারণে গ্রীষ্মকালেও সন্ধের পর থেকেই ম্যাল চত্বর সুনসান হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি এলইডি স্ক্রিনের সৌজন্যে রাত আটটার পরেও পর্যটকদের ম্যালে দেখা যাচ্ছে। মুক্ত মঞ্চের সিঁড়িতে চলছে জমাট আড্ডা। সে কারণে ম্যাল এলাকার নিরাপ্তাও বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

দার্জিলিঙের জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘পর্যটকদের ভাল রকমের ভিড় রয়েছে। সন্ধ্যের পরেও ম্যালে ভিড় থাকছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও বাড়ানো হয়েছে।’’

ম্যাল থেকে নেমে রাজভবনের পাশ দিয়ে দার্জিলিং চিড়িয়াখানার দিকে রাস্তা পাক খেয়ে উঠে গিয়েছে। শুক্রবার দুপুর একটাতেও সেই রাস্তায় কুয়াশা জমাট বেঁধে রয়েছে। কুয়াশার মাঝে দাঁড়িয়ে কয়েকজনকে সেলফি তুলতে দেখা গেল। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সোমঋতা দত্তের কথায়, ‘‘আমাদের ওখানে এখন ৩৫ ডিগ্রিরও বেশি চলছে। সেখানে দার্জিলিঙে দুপুর বেলায় কুয়াশা দেখে চমকে উঠেছি। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাইনি, সকলে বলছে মেঘের কারণে দেখাও যাবে না। তাতে কিছু যায় আসে না। কুয়াশা দেখেই দার্জিলিং ঘুরতে আসা সার্থক।’’ রিচমণ্ড হিলের কিছুটা উপরে নাইটেঙ্গল পার্কের পাইন গাছের সারিও কুয়াশায় ঢেকেছিল এ দিন দুপুরে। দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের বাসিন্দা সাত্যকী চক্রবর্তী জানালেন দু’দিন ধরে দার্জিলিং রয়েছেন। পার্কের বেঞ্চিতে বসে তিনি জানালেন, ‘‘সকালবেলায় একটু এ দিন ও দিক ঘোরাফেরা করি। সন্ধ্যে থেকে নিয়ম করে ম্যালে গিয়ে বসছি। ওখানে একটা উৎসবের পরিবেশ চলছে। প্রতিবারই গরমে দার্জিলিঙে আসি। তবে এবার অন্যরকম মনে হচ্ছে।’’

সম্প্রতি শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ফের টয়ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সেটিও পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘গ্রীষ্মের মরশুম শেষ। বর্ষা নেমেছে, তবু দার্জিলিঙে পর্যটকদের ঢল কমেনি।’’

কুয়াশা ঢাকা সকাল-দুপুর, পাকদন্ডি পথে টয়ট্রেনের চলে যাওয়া, সন্ধ্যের ম্যালে এলইডি স্ক্রিন সব মিলিয়ে সরগরম দার্জিলিং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন