চিকিৎসা শুরু ঘরবন্দি ছেলের

বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া জোসেফ এখন আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন দমনপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

অসুস্থ: জোসেফ খাড়িয়া। আলিপুরদুয়ারে। নিজস্ব চিত্র

মা জোর করে আটকে রেখেছিল ছেলেকে। বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করলেই মারধর করতেন ছেলেকে। পনেরো বছর পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে কথা বললেন জোসেফ খাড়িয়া।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া জোসেফ এখন আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন দমনপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁকে।

শুক্রবার জোসেফ জানান, ক্লাস ফোর পর্যন্ত তিনি একটি হিন্দি স্কুলে পড়েছিলেন। স্কুলের নাম মনে নেই। তবে তাঁর দাদু মারা যাওয়ার পর থেকেই মা বীনা খাড়িয়া তাঁকে ঘর থেকে বের হতে দিতেন না। জোসেফ বলেন, “মা-র মাথা খারাপ আছে। দাদু মারা যাওয়ার পরে স্থানীয় একটি জায়গায় দাদুকে কবর দেওয়া হয়। মা ভয় পেত মারা যাওয়ার পরেও দাদু আমাকে দেখবে। প্রথম প্রথম দু’হাত বেঁধে ঘরে রেখে দিত। কিছু বললেই লাঠি দিয়ে পায়ে মারত। মাঝে মধ্যে একটি বাটি করে ভাত খেত দিত।’’

Advertisement

তবে জোসেফ যে বন্দিদশা কাটাতে পালানোর চেষ্টা করেননি, তা নয়। তবে সফল হননি। দীর্ঘ সময় ঘরে বন্দি থাকার সময় মাঝে মাঝে জোসেফ হামাগুড়ি দিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি জানান, বীণা দেখতে পেলেই ছেলেকে টেনে ঘরে ঢুকিয়ে তাঁকে মারধর করতেন। তাই বাইরে বের হতে চাইতেন। কিন্তু মা-র ভয়ে বের হতে পারতেন না। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ থাকত। কিন্তু কেন তিনি চিৎকার করে সাহায্য চাননি? চিৎকার করলে তো তাঁর গলার আওয়াজ পড়শিদের কানে যেতে পারত! এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য নীরব থেকেছেন জোসেফ। মৃদু স্বরে কেবল জানান, তিনি আবার হাঁটতে চান।

আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে সুপার চিন্ময় বর্মন জানান, শুক্রবার সকালে মহিলা ওয়ার্ড থেকে কিছু ক্ষণের জন্য নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন বীণা। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পুলিশ রাস্তা থেকে তাঁকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক সমীরণ মন্ডল জানান, পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বীণাদেবীকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখানোর কথা ভাবা হচ্ছে।

এ দিন দমনপুর এলাকায় জোসেফদের পড়শি দীপ দে সরকার জানান, ছোটবেলায় জোসেফকে দেখেছেন। তাঁদের বাড়ির সীমা প্রাচীরের কাছেই বীণাদেবীদের কাঠের ভাঙাচোরা ঘর। তিনি বলেন, ‘‘জোসেফের গলা পেতাম না। জানতাম না ও ওই ঘরেই আছে। ওর চিকিৎসা শুরু হওয়ায় আমরা খুশি।’’

এলাকার তৃণমূল নেতা আ্যালবার্ট সাংমা জানান ওদের কীভাবে ঘরের ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা বলব। জোসেফকে উদ্ধারের অন্যতম মূল উদ্যোক্তা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক মুখের রাতুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। তবে কী ভাবে মা ও ছেলের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে মহকুমা শাসককে বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন