অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র
উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা চলছে। হলঘরে পিন পড়ার স্তব্ধতা। পরীক্ষার্থীদের অনেকেই শুনেছে, মেখলিগঞ্জের ওই স্কুলে পরীক্ষা চলাকালীন ঘাড় ঘোরানোর উপায় থাকে না। পরীক্ষা দিতে এসে সেটা তারা টেরও পাচ্ছে হাড়ে হাড়ে। চেয়ারে বসা তো দূরের কথা, পরীক্ষক কোথাও স্থির হয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়াচ্ছেনও না। সমানে সারা ঘরে পায়চারি করছেন। চারদিকে তাঁর কড়া নজর।
এ দিকে বেলা বয়ে যাচ্ছে। হলঘরের পিছনে, ওই কোণের দিকে এক পরীক্ষার্থী অনেকক্ষণ ধরেই উসখুশ করছে। তার পকেটে মাইক্রো-নকল। মাথাভর্তি দুশ্চিন্তা। কোন প্রশ্নের, কোন উত্তর, কোন ভাঁেজ রয়েছে সেটা তার মুখস্থ। কিন্তু সেই মাইক্রো বের করতে না পারলে তাকে ম্যাক্রো-ঝঞ্ঝাটে পড়তে হবে! তাই ঝুঁকি নিয়েই সে নকল করতে শুরু করল। বাঁ হাতে কায়দা করে রাখা চিরকুট। আর ডান হাতে পেন ছুটছে ঝড়ের গতিতে। পরীক্ষকের হঠাৎ সন্দেহ হল। হওয়ারই কথা। এত বছরের অভিজ্ঞতার তো একটা দাম রয়েছে! তার পরে বেশ কিছুক্ষণ আড়চোখে খেয়াল করে নিশ্চিত হলেন, তিনি যা ভেবেছেন ঠিক তা-ই। গুণধর পরীক্ষার্থী নকল করছে।
ব্যস, গুটিগুটি পায়ে পরীক্ষক এগোতে থাকেন ওই পরীক্ষার্থীর দিকে। হতচ্ছাড়াকে এক্কেবারে হাতেনাতে ধরবেন! কিন্তু তার কাছে যেতেই ঘটে গেল কাণ্ডটা। প্রথমে খক। তার পরে নাগাড়ে খক..খকখক...খকখক...। চকিতে কয়েক পা পিছিয়ে এলেন পরীক্ষক। অস্ফূটে বিড়বিড় করলেন, ‘‘করোনা নাকি!’’ পরীক্ষক ভয় পেয়েছেন বুঝতে পেরে অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় বাঁ হাত থেকে সেই চিরকুট ভোজবাজির মতো উবে গিয়ে ঠাঁই পেল নির্দিষ্ট পকেটে। তার পরে পরীক্ষক আর ওই পরীক্ষার্থীর ছায়া মাড়াননি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক বলছেন, ‘‘চারপাশে করোনা-করোনা করে যা চলছে, তার পরে অমন জোরালো কাশিতে ভয় পাব না, বলুন তো!’’
কিন্তু সত্যিই কি ওই পরীক্ষার্থী অসুস্থ? এ বার শিক্ষকের গলায় স্পষ্ট রাগ। বলছেন, ‘‘আমিও তো প্রথমে সেটা ভেবেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল। তখন আর কাশি-টাশি কিস্যু নেই! ফের ব্যাটাকে হাতেনাতেই ধরব।’’