আঁধারেও আশা চায়ের সুবাসেই

ভোরে উঠে কোদাল কাঁধে ঝুলিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের শহরে কাজ খুঁজতে গিয়েছিল কুমলাই চা বাগানের রামনরেশ মালপাহাড়ি। বেলা গড়িয়েছে। কাজ মেলেনি। একসময়ে এই কুমলাই চা বাগান কিং অব ডুয়ার্সের উপাধি পেয়েছিল।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

মালবাজার শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

সকাল-সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা চায়ের পেয়ালা আচ্ছন্ন করে রাখে বাঙালিকে। তবে রাজ্যের পাহাড় তরাই আর ডুয়ার্সের প্রধান এই শিল্পের অন্দরের ছবি কিন্তু মিশ্র। কোথাও তীব্র অসন্তোষের আগুন। কোথাও আবার হতাশার মাঝেও চায়ের সুগন্ধ আশা জাগায়।

Advertisement

ভোরে উঠে কোদাল কাঁধে ঝুলিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের শহরে কাজ খুঁজতে গিয়েছিল কুমলাই চা বাগানের রামনরেশ মালপাহাড়ি। বেলা গড়িয়েছে। কাজ মেলেনি। একসময়ে এই কুমলাই চা বাগান কিং অব ডুয়ার্সের উপাধি পেয়েছিল।

দেড় দশক ধরে অচল রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের স্মৃতিমেদুর অনেক প্রবীণ শ্রমিকই ৬০ এর দশকে বৈজয়ন্তীমালার নাচের দৃশ্য মনে করতে পারেন। হাটে বাজারে সিনেমার পুরো ইউনিট ছিল এই বাগানে। বাগান মালিকের নিজস্ব হাতি ছিল। শুটিং শেষে সেই হাতির পিঠে করে ডায়না নদীর দিকে বেড়াতে যেতেন অশোককুমার, বৈজয়ন্তীমালারা।

Advertisement

বিষাদের সুর ছাপিয়ে অনেক বাগান থেকেই অবশ্য আশার আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। গাঠিয়া বাগানের চা নিলামে সব থেকে বেশি দামের বিক্রি হয়েছে। ইনডং এর মত ছোট মালিকানা গোষ্ঠীর বাগানও গুণগত মানে নজর কাড়ছে। অর্থাৎ সদর্থক ইঙ্গিতও ছড়ানো।

জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলাতে ফি বছর ৭ শতাংশেরও বেশি চাষের জমিতে চা চাষ হচ্ছে। যে কৃষক আগে শুধু মাত্র ধান চাষ করতেন তিনি তুলনামূলক উঁচু জমিতে চা বাগান তৈরি ফেলছেন। এই ছোট চা বাগান থেকে আসা চা পাতা বড় চা বাগান গুলিকেও চ্যালেঞ্জের মুখে এনে ফেলেছে। চায়ের মত দীর্ঘমেয়াদী চাষে নির্ভরতা পাচ্ছেন চাষিরা ।

কিন্তু শ্রমিকদের দাবি আজও অবহেলিত। তিন বছর ঘুরতে চললেও চা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি আজও বিশবাঁও জলে। জমির অধিকার অর্থাৎ পাট্টা মেলার ক্ষেত্রেও জটিলতা দূর হয় নি। বাগানের স্বাস্থ্য পরিষেবা, রেশন নিয়ে অভিযোগের পাহাড়।

বদলে যাচ্ছে ডুয়ার্সের প্রকৃতি। আতঙ্ক তাতেও। বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা দুইই কমছে। প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হলে জৈব চাষেই ফিরতে হবে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের। সেজন্যে টাটার মত চা গোষ্ঠী ছায়া গাছে লতানো গোলমরিচের চাষ করছে। গুডরিক গোষ্ঠী তাদের বাগানের ফাঁকা জায়গায় বিশেষ ডেয়ারি ফার্ম তৈরি করেছে। কেউ ব্যবসার সঙ্গে চা পর্যটনকে জুড়ে বিকল্প আয় খুঁজছেন। প্রবীণ চা গবেষক, টি অ্যাসোসিয়েশনের কর্ণধার রামঅবতার শর্মা। তাঁর মত, ‘‘ছোট চা চাষিরা বাড়বে। বর্ধিষ্ণু বাগান গুলোকে পরিকাঠামো বদলে খুব ভাল মানের চা তৈরি করতে হবে। কারণ চায়ের কদর আরও বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন