চাষিরাই ব্রাত্য, জানাই যায় না সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির তারিখ

হঠাৎ করে শুনলে মনে হবে আজব ঘটনা। যা বিশ্বাস করা কঠিন অনেকের কাছেই৷ কিন্তু সেটাই বাস্তব আলিপুরদুয়ারের অনেক চাষির কাছেই। বংশ পরম্পরায় ধানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন প্রত্যেকে৷ অথচ, তাঁদের অনেকে আগাম জানতেই পারেন না, সরকারের কাছে সহায়ক মূল্যে ধান কবে বিক্রি করা যাবে!

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

প্রতীকী ছবি

হঠাৎ করে শুনলে মনে হবে আজব ঘটনা। যা বিশ্বাস করা কঠিন অনেকের কাছেই৷ কিন্তু সেটাই বাস্তব আলিপুরদুয়ারের অনেক চাষির কাছেই। বংশ পরম্পরায় ধানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন প্রত্যেকে৷ অথচ, তাঁদের অনেকে আগাম জানতেই পারেন না, সরকারের কাছে সহায়ক মূল্যে ধান কবে বিক্রি করা যাবে! তাঁরা শুধু এ টুকুই জানেন, দিন কয়েক পর পর এলাকায় একটি গাড়ি আসে৷ সঙ্গে আসেন সরকারি কর্মী বা সমবায়ের লোকেরা৷ তাঁরা যে পাইকারদের কাছে ইতিমধ্যে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন, সেই পাইকাররাই সরকারি কর্মী বা সমবায়ের লোকেদের ধানের হিসাব বুঝিয়ে পরের পর বস্তা গাড়িতে তুলে দেন৷ সেই কৃষকরা দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখেন৷

Advertisement

ফড়েদের এড়িয়ে সরকারি শিবিরে ধান বিক্রি করতে চাষিদের সাহায্য করা হচ্ছে বলে যখন দাবি করছে প্রশাসন, তখন জেলার প্রত্যন্ত এলাকা তো বটেই, আলিপুরদুয়ার শহরের কাছাকাছি গ্রামেও এমন ঘটনা চলছে বলে অভিযোগ৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই অভিযোগের কথা মেনে নিয়েছেন সরকারি কর্মীদের একাংশও৷ যদিও খাদ্য দফতরের কর্তারা তা মানছেন না৷

আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের চাপাতুলি এলাকায় বাড়ি মঙ্গল রায়, রামকৃষ্ণ রায়দের৷ কৃষিমেলা দেখতে বীরপাড়া কিসান মান্ডিতে এসেছিলেন তাঁরা৷ তাঁদের মতো অন্য কৃষকদের অনেকে প্রতিদিনই সেখানে ধান বিক্রি করতে যাচ্ছেন শুনে অবাক প্রবীণ ওই দুই কৃষক৷ তাঁরাও কী করে কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করবেন তা জানতে খোঁজ শুরু করলেন সরকারি আধিকারিকদের৷ কিন্তু তাঁদের নিজেদের এলাকায় কি ধান বিক্রির সুযোগ নেই? বৃদ্ধ মঙ্গলবাবুর উত্তর, “হঠাৎ করে কোনও একদিন কোনও মাঠে ধান কেনা-বিক্রি হতে দেখা যায়৷ কিন্তু আমরা আগে তা জানতেও পারিনা৷ ফলে আমাদের ভরসা ওই পাইকাররাই৷ তাঁদের কাছে যে দাম পাই, তাতেই ধান বিক্রি করে দিই৷’’ এলাকারই আরেক কৃষক বলছেন, ‘‘যেদিন সমবায়ের লোকেরা এলাকায় ধান কিনতে আসেন, সেখানে পাইকাররাই ভিড় করে থাকেন৷ আমাদের থেকে কেনা ধানই ওঁরা সেখানেই বিক্রি করে দেন৷”

Advertisement

তবে শুধু চাপাতুলিই নয়৷ জেলার বহু জায়গাতেই কৃষকদের ধান বিক্রি নিয়ে এমন পরিস্থিতি চলছে বলে অভিযোগ৷ সে সব জায়াগাতেই কৃষকরা পাইকার বা ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে দাবি স্থানীয়দের৷ সরকারি জায়গায় সেই পাইকার বা ফড়েরাই গিয়ে কৃষকদের সেই ধান বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ৷ ধান কেনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মীদের একাংশের মতেও, ঘটনাটি একেবারে ভুল নয়৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, রাইস মিলগুলি কবে কোন এলাকার জন্য একটি গাড়ি পাঠাবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা খুব বেশি হলে দিন তিনেক আগে জানা যায়৷ সঙ্গে সঙ্গে সমবায়ের লোকেদের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়৷ তাঁরাই মূলত এলাকার কৃষকদের ধান বিক্রির দিন ও জায়গার কথা জানান৷ কিন্তু একটা গাড়িতে যে পরিমাণ ধান নেওয়া যায়, তাতে করে একদিনে এক এলাকা থেকে ছ-সাতজনের বেশি কৃষকের থেকে ধান নেওয়া সম্ভব নয়৷ ফলে খবর পেয়ে সব কৃষক ধান বিক্রি করতে চলে এলে সমস্যা তো হবেই৷ তাছাড়া যারা ধান বিক্রি করছেন তারা আদৌ কৃষক কি না তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা তাঁদের কাছে নেই বলেও স্বীকার করে নেন ওই সরকারি কর্মীদের একাংশ৷

যদিও, অভিযোগগুলি মানতে নারাজ খাদ্য দফতরের কর্তারা৷ আলিপুরদুয়ার জেলা খাদ্য নিয়ামক দাওয়া ওয়াংদেন লামা বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়৷ কোনও এলাকায় যেদিন ধান কেনা হবে তার সাতদিন আগে থেকে এজেন্সির লোকেরা প্রচার করে সব কৃষককে জানান৷ তাছাড়া, কৃষক বাদে অন্য কেউ যাতে ধান বিক্রি করতে না পারেন, সেজন্যই একজনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন