এক শয্যায় দু’জন করে রোগী। এমনকী, বারান্দা এবং মেঝেতেও জায়গা নেই। জ্বরে কাবু স্বামীর জন্য তাই কোথায় বিছানা পাতবেন, ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মালদহের কালিয়াচকের সুজাপুরের বাসিন্দা সাবিনা বিবি। পরে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর সহযোগিতায় জরুরি বিভাগের সামনের বারান্দায় ঠাঁই হয় ওই রোগীর। কোনও রকমে ঠাঁই মিললেও পরের চিন্তা, স্যালাইন ঝোলাবেন কী ভাবে? অবশেষে দেওয়ালে কাঁটা পুঁতে সেখান থেকে ঝোলানো হল স্যালাইন।
সাবিনা বিবি একা নন, জ্বরের দাপট অব্যাহত থাকায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমনই অভিজ্ঞতার শিকার হতে হচ্ছে অনেককেই। জায়গা ও সঠিক পরিষেবা না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন রোগীর আত্মীয়রা।
যদিও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিকাঠামোর থেকে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে ওই ওয়ার্ডগুলোতে। যার জন্য প্রত্যেককে জায়গা দিতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। হবিবপুরের বাসিন্দা তারক সাহা বলেন, “আমার বোনের জ্বর হওয়ায় চিকিৎসক ভর্তি হতে বলেছেন। ওয়ার্ডের কোথায় বোনকে রাখব তা বুঝতেই পারছি না।’’
রাজ্যে শীত এলেই ডেঙ্গি কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করলেও মালদহে জ্বরের রোগীর স্রোত অব্যাহত। মেডিক্যাল কলেজ ও জেলার অন্য গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন জ্বরে আক্রান্ত অসংখ্য রোগী। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেলায় ৩২৫ জন রোগী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধুমাত্র ইংরেজবাজার শহরেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ জন। এমনকী, স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুসারে জেলায় ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। ফলে শীত পড়লেও জ্বর নিয়ে এখনও আতঙ্ক কমেনি মালদহে।
যদিও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করেছে গত দু’দিন ধরে। আর কিছুদিন গেলেই ধীরে ধীরে জ্বরের প্রকোপ কমবে, এমনই আশা করছেন তাঁরা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈয়দ শাহজাহান নিজাম বলেন, “এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির উপরে নজর রেখে চলেছি।”
মালদহ মেডিক্যাল কলেজের পুরুষ মেডিসিন বিভাগে ৭৫টি এবং মহিলা মেডিসিন বিভাগে ৬০টি শয্যা রয়েছে। এছাড়া দুই ওয়ার্ডের ভেতরের বারান্দায় প্রথমে দশটি করে শয্যা বাড়ানো হয়েছিল। পরে রোগীর চাপ সামাল দিতে আরও ২০টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে।
এ দিন দুপুর পর্যন্ত ওয়ার্ডগুলিতে ভর্তি রয়েছেন ৫২০ জন রোগী। একটি শয্যায় দু’জনকে করে দেওয়ার পরেও তাই ওয়ার্ডগুলির মেঝেতে তোশক পেতে রোগীদের রেখে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। লম্বা করে দড়ি বেঁধে স্যালাইন ঝোলানো হচ্ছে।
মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার অমিত কুমার দাঁ বলেন, “গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে রেফারের সংখ্যা না কমালে আমাদের পক্ষে জেলার সমস্ত রোগীকে একসঙ্গে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না।”