কষ্ট হলেও দিদির সভা ছাড়লেন না রমলা, কৃষ্ণ

আজ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কোনও সভা বাদ দেননি শিলিগুড়ির শান্তিনগরের মীরা ঘোষ। বাড়িতে দেখার কেউ নেই বলে প্রতিবন্ধী নাতিকে হুইলচেয়ার ঠেলে ভিড় সভায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৩
Share:

সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে তৃণমূলের ছাত্র যুব সম্মেলনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

গলায় ঝোলানো ঝুড়ি ভর্তি বাদামভাজা, হাতে দলের পতাকা। মিছিলে হেঁটে ঢুকলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। সভা শুনলেন, বাদামও বিক্রি করলেন প্রফুল্ল হলদাস। মাইকের দিকে মোবাইল ধরে কাউকে বক্তৃতা শোনাচ্ছিলেন ঘোঘোমালির রমলা বর্মন। প্রশ্ন করতেই লাজুক স্বরে বললেন, ‘‘বাসাবাড়িতে কাজ করি। বাড়ির দিদিমণিকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনালাম। কাজে যেতে পারব না তো। তার প্রমাণও দিলাম।’’

Advertisement

আজ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কোনও সভা বাদ দেননি শিলিগুড়ির শান্তিনগরের মীরা ঘোষ। বাড়িতে দেখার কেউ নেই বলে প্রতিবন্ধী নাতিকে হুইলচেয়ার ঠেলে ভিড় সভায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে সোমবার দেখা মিলল এমনই নানা জনের। কলেজ ‘বাঙ্ক’ করে পাহাড় থেকে শিলিগুড়ির সভায় এসেছিলেন মিরিকের কয়েকজন কলেজ পড়ুয়াও। সঙ্গম রাই, সুহান রাই এবং রিকি গুরুঙ্গ। লাইনে দাঁড়িয়ে ডিম-ভাতও খেলেন। পাহাড় থেকে আসা অন্য তৃণমূল সমর্থকদের মতো তাঁরা ক্যামেরা দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেননি। সঙ্গমের মন্তব্য, ‘‘পাহাড়ের অনেকে সমতলে এসে ছবি তোলাতে ভয় পায়। যদি পাহাড়ে পরে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট করেছি, বন্‌ধের সময়ে পাল্টা মিছিল করেছি। আমাদের কোনও ভয় নেই।’’

Advertisement

শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির প্রফুল্লবাবু সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। পেশায় বাদামো ভাজা বিক্রেতা। সোমবার স্টেডিয়ামে ছাত্র-যুব সম্মেলনে আসার নির্দেশ দিয়েছিল দলের নেতৃত্ব। একদিন কাজে না গেলে রোজগার বন্ধ থাকে। উভয়সঙ্কটে পড়েছিলেন। পরে তিনিই বের করেন সঙ্কটমুক্তির পথ। দলের মিছিলে আসেন, সঙ্গে বাদামের ঝোলা নিয়ে। স্টেডিয়ামে বসে দিব্যি বাদামভাজা বিক্রি করলেন। বুকে তৃণমূলের ব্যাজ। যা দেখে ওই গ্যালারির নীচে থাকা কৃষ্ণ হালদারের মন্তব্য, ‘‘এই হল রথ দেখা এবং বাদাম ভাজা।’’ কৃষ্ণবাবু এসেছিলেন সোদপুর থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অভিষেকের ছবি বিক্রি করতে। মুখ্যমন্ত্রীর সভা যেখানেই থাক সেখানেই পৌঁছে যান তিনি।

গ্যালারির নীচ দিয়ে যাওয়া ভিড়ের ঠেলায় মাঝে মধ্যেই হুইলচেয়ার এগিয়ে যাচ্ছিল। শেষে দিদিমা গ্যালারি থেকে নেমে চেয়ার আগলে দাঁড়ালেন। মীরা ঘোষ বলেন, ‘‘নাতিকে একা বাড়িতে রেখে তো সভায় আসতে পারি না।’’ কিছুটা পথ অটোয়, কিছুটা হেঁটে চেয়ার ঠেলে বাড়ি থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে স্টেডিয়ামে এসেছেন। বললেন, ‘‘কষ্ট তো হল। দিদি যখন বিরোধী নেত্রী, তখনও তাঁর সভা মিস করিনি। সেই রেকর্ড তো থাকল।’’

নিউ জলপাইগুড়ির ক্ষীরোদ বর্মন পেশায় টোটো চালক। বাংলার সঙ্গে নেপালি এবং সাদ্রীও ঝরঝরে বলতে পারেন। সে কারণেই তাঁকে দেখেই নেতারা দাঁড় করিয়ে দেন খাওয়ারের কাউন্টারে। ক্ষীরোদবাবু নানা ভাষায় চেঁচিয়ে বলতে থাকেন, ‘‘থালা নিয়ে সকলে স্টেডিয়ামে ঢুকে যান। বাইরে কেউ খাবেন না, থালা ফেলবেন না। পরিবেশ ভাল রাখুন।’’ তাঁর নিজের অবশ্য স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢোকা হল না এদিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন