(বাঁ দিকে) পড়াচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ বর্মন। (ডান দিকে) ‘কর্তব্য’-এর কোচিং সেন্টার। ছবি :হিমাংশুরঞ্জন দেব, মনোজ মুখোপাধ্যায়।
অভাবের তাড়নায় কারও দাদা ষষ্ঠ শ্রেণিতেই ছেড়ে দিয়েছেন পড়াশোনা। কারও সংসার চলে দিনমজুরি করে। তাই বাবার কাছে টিউশন ঠিক করে দেওয়া তো দূরের কথা, একখানি বই কিনে দেওয়ার কথা বলতে দুবার ভাবতে হয় কাউকে। গ্রামের এমন ঘরের ছাত্রছাত্রীদের বিনে পয়সায় পড়িয়ে তিনি ‘স্যার’ হয়ে উঠেছেন। কোচবিহারের দিনহাটার কুর্শাহাটের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ বর্মন। এক সময় ‘বইকাকু’ হিসেবেই পরিচয় ছিল তাঁর। গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরিব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বই বিলি করে বেড়াতেন তিনি। গত ছয় বছর ধরে রীতিমতো কোচিং সেন্টার তৈরি করে সেখানে পড়ানো শুরু করেন। নবম শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্য়ন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হয় সেখানে। দেখতে দেখতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার। শিক্ষকও এখন সবমিলিয়ে ছয়। রবীন্দ্রনাথবাবুকে দেখে এগিয়ে এসেছেন আরও পাঁচজন।
রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য সে সব কিছু লুকিয়ে রাখতে চান। তিনি বলেন, “এ আর তেমন কিছু নয়। আসলে জীবনে বহু বার দেখেছি গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা টাকাপয়সার অভাবে অল্পেতেই পড়া ছেড়ে দেন। তাই এই পথ নিয়েছি।”
ঠিক তেমনই শিক্ষকতার পেশা থেকে তাঁর অবসর নেওয়ার পর রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রবীর রায়ের ১০ মাস কেটে গিয়েছে, আজও শিক্ষকতা ছাড়তে পারেননি তিনি। গরিব পড়ুয়াদের রেফারেন্স বই দিয়েও সহযোগিতা করছেন প্রবীরবাবু। বর্তমানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গড়ে ৪০ জন করে পড়ুয়া তাঁর বাড়িতে ভিড় করেন।
আবার অমরজিত সিংহ চহ্বাণই এক সময় কড়া হাতে সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব সামলেছেন, পরে স্বেচ্ছাঅবসর নিয়ে ফিরেই খুনে পাগল হাতি দমনে বনদফতরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ৬ ফুট উচ্চতার সেই প্রাক্তন মেজরই পরে স্কুলের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দিয়েছেন। আদিবাসী পড়ুয়াদের আবাসিক ইংরেজি মাধ্যমের সেই স্কুলে পড়ুয়াদের আশি শতাংশই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। অধ্যক্ষের জীবনে সবথেকে বড় সাফল্য মিলেছে চলতি বছরে। এ বছর একলব্যের ৪৬ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। প্রত্যেকেই প্রথম বিভাগে পাশ করে জেলায় নজির গড়ে দিয়েছে।
মালদহে যেমন উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে ‘কর্তব্য’। গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে মালদহের ইংরেজবাজার শহরের কামারপাড়ায় গড়ে উঠেছে এই কর্তব্য। উদ্যোক্তা হলেন মালদহ রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের ১৯৯২ সালের মাধ্যমিকের ছাত্ররা। সেই দিনের ছাত্ররা আজ প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত। এলাকার দুস্থ পরিবারের ছেলে মেয়েদের বিনামূল্যে পড়াশোনার জন্য কর্তব্য নামে কোচিং সেন্টার খুলেছেন তাঁরা। দৈনিক সন্ধ্যের পর ছেলে মেয়েদের এখানে পড়ানো হয়।