মাধ্যমিক মেলাল দুই বন্ধুকে

স্কুলের এই ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ মাধ্যমিকে একই নম্বরে এসে মিলিয়ে দিয়েছে একই পাড়ার দুই বন্ধুকে! জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের দুই পড়ুয়াই রাজ্যে মাধ্যমিকে তৃতীয় হয়েছে। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০২:৪২
Share:

মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের নীলাব্জ ও মৃন্ময়। এই ঘটনায় আপ্লুত প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক ধীরাজমোহন ঘোষ। বুধবার স্কুলে এসে মার্কশিট দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাঁর প্রিয় দুই ছাত্রকে। ছবি: সন্দীপ পাল।

স্কুল ক্রিকেট দলের দাপুটে খেলোয়াড় নীলাব্জ দাস। অন্য জেলাতেও গিয়ে খেলেছে। মৃন্ময় মণ্ডল স্কুলের ক্যুইজ দলের অপরিহার্য সদস্য। কলকাতা থেকে a নিয়ে এসেছে সে-ও। কোনও ক্লাসে নীলাব্জ প্রথম হলে মৃন্ময় দ্বিতীয় হয়েছে। আবার হয়তো পরের ক্লাসে মৃন্ময় প্রথম, নীলাব্জ দ্বিতীয়। স্কুলের এই ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ মাধ্যমিকে একই নম্বরে এসে মিলিয়ে দিয়েছে একই পাড়ার দুই বন্ধুকে! জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের দুই পড়ুয়াই রাজ্যে মাধ্যমিকে তৃতীয় হয়েছে। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭।

Advertisement

স্কুলের কোনও পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে দুই বন্ধু সোজা পরীক্ষার খাতা হাতে চলে যেত শিক্ষকের কাছে। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে স্কুলের শিক্ষক কৌশিক সিকদারের বুধবার বললেন, “কেন কম নম্বর পেয়েছে তা কিন্তু ওরা জানতে চাইত না। কোথায় ভুল হয়েছে সেটাই জানতে চাইত। পড়াশোনায় ভাল হলেও কেউ বই মুখে করে কোনওদিন বসে থাকত না। ক্রিকেট, ক্যুইজ নিয়েই মেতে থাকত ওরা।”

নীলাব্জ এবং মৃন্ময় দু’জনেই পরীক্ষার ভাল ফলের প্রাথমিক কৃতিত্ব দিয়েছে নিজেদের বাবা-মাকেই। নীলাব্জের বাবা তনয় দাস এবং মা লিপিকা দু’জনেই স্কুলশিক্ষক। বাবা-মায়ের কাছেই পড়ত নীলাব্জ। মৃন্ময়ের বাবা রণজিৎ মণ্ডল শহর লাগোয়া স্কুলের বাংলা শিক্ষক। সব বিষয়ের একজন করে গৃহশিক্ষক থাকলেও মৃন্ময় বাংলা পড়ত বাবার কাছেই।

Advertisement

স্কুলে দু’জনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা থাকলেও পাড়ার বন্ধুত্ব নষ্ট হতে দেয়নি কেউই। এদিন টিভিতে ফল দেখে দুই বন্ধ ফোন করে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। নীলাব্জের কথায়, “প্রতিযোগিতা তো থাকবেই। তা-ই বলে বন্ধুত্ব নষ্ট হবে কেন!” ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় নীলাব্জ। অন্যদিকে, মৃন্ময়ের লক্ষ্য গুগল সংস্থায় চাকরি করা। দু’জনের মধ্যে আরও একটি বিষয়ে মিল রয়েছে। বন্ধুদের অনেকেরই ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট থাকলেও ওরা এখনও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পা দেয়নি।

মৃন্ময় অবশ্য গুগল ঘাঁটাঘাঁটিতে পারদর্শী। সিনেমা ডাউনলোড করে নিজেই মোবাইলে দেখে। সেই থেকেই নেট জগতে হাতছানি। বুধবার ফল শোনার পর মৃন্ময় বলেছে, “পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে।” দুই বন্ধুর মোট নম্বরের সঙ্গে তিনটি বিষয়ের নম্বরও এক। অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞানে দু’জনেই ১০০, জীবনবিজ্ঞানে দু’জনের নম্বরই ৯৯।

জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার শেষ মাথায় বাড়ি দু’জনের। ব্যাটবল হাতে যে দু’জনকে পাড়ার গলিতে সকাল-বিকেল দেখেন বাসিন্দারা, এদিন তাদের ছবিই টিভির পর্দায় দেখেছেন সকলে। সকাল থেকেই দু’জনের বাড়ির সামনে অভিনন্দন জানাতে আসা পড়শি-আত্মীয়দের জটলা। দুপুরে স্কুলের ইউনিফর্ম পরে নীলাব্জ ডাকতে এল মৃন্ময়কে। দুই বন্ধু একসঙ্গে টোটোয় চেপে মার্কশিট আনতে রওনা দিল স্কুলের দিকে। প্রতিদিনের মতোই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন