ফিরে: শিলিগুড়ির সাফারি পার্কে নিজের ডেরায় সচিন। নিজস্ব চিত্র
তখনও পিচে ফেরেনি নিখোঁজ সচিন। তার বদলে শুক্রবার সকাল সকাল ব্যাটিং করতে নেমে পড়েছে অন্য দুই খেলোয়াড় কাজল ও শীতল। বেঙ্গল সাফারি পার্কের লেপার্ড সাফারিতে ওই দুই স্ত্রী চিতাবাঘই দর্শকদের মনোরঞ্জনের দায়িত্ব নিয়েছিল। প্রথম দিনই পিচে টিকে থেকে পাকা হাতে সাফারির দর্শকদের উচ্ছ্বাস সামলেছে তারা।
সচিনের ফিরে আসার অপেক্ষায় না থেকে চিতাবাঘ সাফারি চালু করে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। সচিনের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনার পরে গত তিন দিন ধরে সাফারি বন্ধ ছিল। সচিন-সৌরভের জুটি আপাত ভাবে ভেঙে যাওয়াতেই সাফারি মুলতুবি করা হয়েছিল, জানিয়েছে পার্ক সূত্র। এ দিন সৌরভকে তুলে নামানো হয়েছিল অন্য জুটি। আবার সচিন পালানোর খবর চাউর হতেই যেন পার্কে আসা দর্শকদের উৎসাহ হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছিল চিতাবাঘের সাফারি নিয়ে।
বেলা তখন প্রায় দেড়টা। শীতের নরম রোদেই টিকিট কাউন্টারের পাশে কাচঘেরা গাড়িতে জমতে শুরু করে ভিড়। সেই দর্শকদের নিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলল তৃণভোজী এনক্লোজ়ারের দিকে। একটা আশঙ্কা তিন দিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিল, সচিন হয়তো এর কাছাকাছি রয়েছে। পায়ের ছাপ দেখে তেমনই মনে করছিলেন বনকর্তারা। কিন্তু বাস্তবে এ দিন সেখানে সচিনের দেখা পাননি দর্শকরা। বরং হরিণ, গন্ডার, পেখম মেলা ময়ূরও আসে গাড়ির কাছে।
কিন্তু দর্শকদের নজর তখন সচিনকে খুঁজছে। চিতাবাঘ নিয়ে প্রশ্ন সামলাতে হিমশিম গাড়ির চালক অসীম টোপ্পো। এর মধ্যে সাফারি এগিয়ে চলে ভালুকের এনক্লোজ়ারের দিকে। ততক্ষণে দমদমের গৃহবধূ মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞাসাই করে ফেললেন, ‘‘চিতাবাঘটা এই ঘেরা জায়গা থেকেই পালিয়েছিল, তাই না?’’ পাশের যাত্রীরা তাঁর ভুল শুধরে দেন, এটা চিতাবাঘের নয়, ভালুকের সাফারি। পুরো চড়াইউতরাইয়ের বন্য রাস্তায় এ দিন যেন সচিনের ছায়াই পিছু ধাওয়া করেছে সাফারি পার্কের। ভালুক দেখার পরেই চিতাবাঘের পালা। শীতল-কাজল জুটি এ দিন থেকে জৌলুস ফিরিয়েছে সাফারি পার্কে। গাড়ি চিতাবাঘ সাফারির এনক্লোজ়ারে ঢুকতেই কৌতূহল বেড়ে গেল চতুর্গুণ। গত কয়েক দিন ধরে সচিনের বিদ্রোহী লাফ প্রচুর গল্পের জন্ম দিয়েছে। এ বারে চিতাবাঘের এনক্লোজ়ারে ঢুকে নতুন চমক।
গাড়ি দেখে এগিয়ে আসে নতুন জুটির একটি চিতাবাঘ। যাত্রীদের সকলেই তখন জানালায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে মোবাইল তাক করে। চোখ ছানাবড়া। এনক্লোজ়ারের জঙ্গলে চিতাবাঘ শিকার ধরার ভঙ্গিতে কখনও স্থির হয়ে মাপছে যাত্রীদেরকেই। কখনও বা গাড়ির দিকে এক পা দু’পা করে এগোচ্ছে। ‘দাদা একটু এগিয়ে’, ‘না, না, গাড়িটা আর একটু পিছিয়ে নিন’, ‘একটু স্লো, থামান, থামান!’ চিতাবাঘ দেখার উচ্ছ্বাসে যাত্রীদের অনুরোধের ঝড় বয়ে যায়। তার পর অবশ্য খানিকটা ক্লান্ত হয়েই সাফারির ভিতরে গর্তে শুয়ে পড়ে চিতাবাঘটি।