Kali Puja 2023

রাজবাড়িতে শিকল-পরা জয়কালীর পুজোই প্রথা

দীপান্বিতা কালীপুজোয় বেড়ি বাঁধা দেবী প্রতিমার সামনে নিবেদন করা হয় খিচুড়ি সঙ্গে পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, নানা তরকারি, পাঁচ রকম মাছ এবং নিরামিষ রান্না করা মাংস।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩০
Share:

পুজোর দিন জলপাইগুড়ি বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ীর জয় কালী সাজানোর কাজ চলছে। ছবি - সন্দীপ পাল।

অন্ধকার জঙ্গলপথে হেঁটে চলেছেন একা এক নারী। কেউ দেখছেন, কেউ দেখছেন না। নারীর অবয়বটি বেরিয়ে এসেছে বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির মন্দির থেকে। জঙ্গলপথ দিয়ে এগিয়ে চলেছে ডাকাতকালী মন্দি্রের দিকে। যে মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন দেবী চৌধুরানী।

Advertisement

নিশুতি রাতে জঙ্গল পথে একা নারী! দিনকাল ভাল নয়। সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ চলছে চার দিকে। অশান্ত সময়ে নিস্তব্ধ রাতে জঙ্গল পথ দিয়ে যে নারী অবয়ব হেঁটে যায়, সে কি মানবী নাকি দেবী! জনশ্রুতিতে ছড়িয়ে পড়ে, রাজবাড়ির মন্দির থেকে কালী বেরিয়ে রোজ রাতে চলে যায় জঙ্গলে ডাকাতকালী মন্দিরে। পুরোহিত এবং মোড়লেরা বসে আলোচনা করলেন, মন্দির থেকে দেবী বেরিয়ে যাবে, এ তো অলুক্ষুণে কথা! অতএব, মানবীকে নিয়ন্ত্রণের যে বেড়ি তা দিয়ে বাঁধা হল দেবী প্রতিমাকেও। সেই থেকে জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির কালী প্রতিমার পায়ে শিকলের বেড়ি পরানো। যাতে দেবী কোথাও চলে যেতে না পারেন।

দীপান্বিতা কালীপুজোয় বেড়ি বাঁধা দেবী প্রতিমার সামনে নিবেদন করা হয় খিচুড়ি সঙ্গে পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, নানা তরকারি, পাঁচ রকম মাছ এবং নিরামিষ রান্না করা মাংস। রাজভোগে পুজো হয় রাজপরিবারের পুজোর। তা দেখতে এ দিন রবিবার বিকেল থেকে ভিড় হয়েছিল বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে।

Advertisement

পাঁচশো বছর পেরিয়ে গিয়েছে রাজবাড়ির মন্দিরের। অষ্টধাতুর তৈরি মূর্তি শতাব্দীপ্রাচীন। রাজবাড়ির দেবীর নাম জয়কালী। রাজবাড়ির মন্দির থেকে নারী অবয়ব বেরিয়ে যে মন্দিরে চলে যেত বলে কথিত রয়েছে। সেটি ডাকাত কালী মন্দির। সেই মন্দিরেও রাজ পরিবারের সদস্যেরা পুজো দিতেন। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে দেবী চৌধুরানীর দল সেই মন্দিরে পুজো দিতেন বলে কথিত রয়েছে। রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল দেবী চৌধুরানীরও। সে কারণে, দুই মন্দিরের সঙ্গেই রাজপরিবারের যোগাযোগ ছিল। রাজপুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, “এখনও আমাদের কালীপ্রতিমার পায়ে বেড়ি পরানো রয়েছে। মন্দির থেকে যাতে দেবী বেরিয়ে না যেতে পারেন, সে কারণেই শোনা যায় এক সময়ে বেড়ি পরানো হয়েছিল। সেই ঐতিহ্য এখনও চলছে।”

রাজবাড়ির কালী প্রতিমাকে নিবেদন করা হয় রাজভোগও। খিচুড়ি নিবেদনের প্রথা রাজবাড়িতেও রয়েছে। সেই সঙ্গে পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা, পাঁচরকম তরকারি এবং পাঁচ রকম মাছের পদ। এই পদের মধ্যে রয়েছে কাতলের ঝাল, ইলিশের ঝোল, বোয়ালের রসা, পটল চিংড়ি এবং চিতল মাছের মুইঠ্যা। সঙ্গে নিরামিষ পদের পাঁঠার মাংস। ফল, মিষ্টি তো রয়েইছে। রাত নিশুতি হওয়ার আগে পুজোও শেষ হয়ে যায় রাজবাড়িতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন